রামপালের বিরোধিতার নামে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষা করছে বামপন্থীরা
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
রামপাল বিদুৎকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন প্রচারণায় জনগণ বিভ্রান্ত হয়েছে। এর যথার্থ কারণও রয়েছে। আপনি যদি প্রতিনিয়ত অর্ধেক কথা বলতেই থাকেন এবং অন্যদেরকে দিয়ে বলান, তাহলে তো তারা বিভ্রান্ত হবেনই। রামপাল বিদুৎকেন্দ্র চুক্তি বিরোধী প্রচারণায় ফান্ড কে করছে? সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে না হলে কার স্বার্থে এই অ্যাক্টিভিটিসÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
তিনি বলেন, রামপাল বিদুৎকেন্দ্র চুক্তি বিরোধীরা ভারতবিরোধী গোষ্ঠী নয়, এরা আসলে ভারত বিরোধীতা করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার গোষ্ঠী। বরং এরা যখন ক্ষমতায় ছিল, সব চেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে। কাগজ-কলমে হিসাব করে দেখিয়ে দিতে পারব। বামপন্থীরা কেন রামপাল বিদুৎকেন্দ্র চুক্তির বিরোধীতা করছে, কারণ তারা বিভ্রান্ত। যদি বিভ্রান্তই না হবেন তাহলে পুরোটা না বলে, অর্ধেক কথা বলবেন কেন? বাণিজ্য চুক্তি থেকে শুরু করে যেকোনো চুক্তির বিরোধীতা বামপন্থীরা করে। কেন করে? তাদের এজেন্ডা কী, আমি জানি না, জিজ্ঞেস করুন তাদের।
তিনি আরও বলেন, এরা আসলে সামাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করছে। কারণ উন্নত দেশগুলো কয়লা দিয়ে বিদুৎ উৎপাদন করে ঠিকই উন্নতিক করেছে, লাভবান হয়েছে। একেক দেশ সিক্সটি, সেভেনটি কিংবা এইটি পার্সেন্ট বিদুৎ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। আমরা করি, মাত্র দুই পার্সেন্ট। আমরা ছোট দেশ, যখন উন্নয়নের স্বার্থে কয়লা দিয়ে বিদুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছি তখনই এসব বামপন্থীদের লেলিয়ে দিয়েছে, বলে দিয়েছেÑ এসব করতে দিবা না। আটকাও। এরা কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে? এরা আসলে সামাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষা করছে। কারণ এরা তো চায় না আমরা এগিয়ে যাই অর্থনীতিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বাংলাদেশে চীনের দালাল ছিল, পাকিস্তানের দালাল ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নেরও দালাল ছিল। এই দালালদের বাইরে একমাত্র যে গোষ্ঠী, দেশের মাটিতে বেড়েছে, বড় হয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থে তা হচ্ছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই একমাত্র জাতীয়তাবাদী দল, বঙ্গবঙ্গু একমাত্র জাতীয়তাবাদী নেতাÑ যা চিন্তা করে বাংলাদেশ কেন্দ্রীক, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রিক। কাউকে বন্ধু বানালে বাংলাদেশের স্বার্থে, শক্রতা করলেও বাংলাদেশের স্বার্থেই করেই।
পাকি পন্থিরা পাকিস্তানের জন্য রাজাকার হয়ে গেছে, আরা চীনা পন্থিরা, চীন যেহেতু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেনি, এরা ২৬ মার্চ পর্যন্ত চিন্তা করেছে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে থাকবে কী, থাকবে না। আর মস্কো পন্থিদের সুবিধা ছিল, যেহেতু রাশিয়া ভারত থ্রোতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়, তখন তারা মুক্তিযুদ্ধে চলে আসে। এরা শুনে এদের মাস্টারদের (প্রভু) কথা। আওয়ামী লীগই একমাত্র যারা দেশের স্বার্থে কাজ করে। আওয়ামী লীগ এখন দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রামপাল বিদুৎকেন্দ্র চুক্তি করেছে তখনই সব জামায়াতি-বামাতি এক হয়ে গেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রামপাল বিদুৎকেন্দ্র চুক্তি বিরোধী অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে জনগণের একটি বড় অংশ এই চুক্তির বিপক্ষে চলে গেছে। কেন গেছে, সুন্দরবনের স্বার্থে। দেশের সাধারণ মানুষের এই স্পিরিটের সঙ্গে আমিও পুরোপুরি একমত। আমিও সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন কোনো চুক্তির পক্ষে নই। যেকোনো দেশপ্রেমিক এমন কিছুর সঙ্গে যেতে পারেন না। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সঠিক জায়গায়ই রয়েছে। দেশপ্রেমের জায়গায় সুন্দরবনের পক্ষে রয়েছে। আর আমাদের কাজ হচ্ছে এখন তাদের বোঝানোÑ আসলে এখানে বাংলাদেশের স্বার্থটা কী? এটা যখন আমরা মানুষকে বোঝাতে পারব, তখন গণদাবি ঘুরে যাবে। ইতোমধ্যে এই গণদাবি ঘুরতে শুরু করেছে। কিছু মানুষ নতুন করে চিন্তা করতে শুরু করেছেন। স্যোসাল মিডিয়ায় নজর রাখুন, রাস্তাঘাটে কথা বলে দেখুন প্রমাণ পাবেন। গণদাবির বাইরে আমরা কিছু করব না। গণদাবি পক্ষে নিয়ে তবেই আমরা কাজ করব দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে। প্রয়োজনে আমরা আরও সময় নিবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিভাবে, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লার দূষণ প্রশমন একেবারে নি¤œস্তরে নিয়ে এসে তারপর এই কাজটি করা হচ্ছে। পরিবেশগত দিক থেকে যদি দেখিÑ এখানে বরং রামপাল বিদুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের লাভ হবে। সুন্দরবন নিয়ে কি কেউ কিছু জানে, যারা এত সুন্দরবন সুন্দরবন করে? সুন্দরবনের আশেপাশে যে জনবসতি, তাদের পদচারণায় যেভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সুন্দরবনের গাছ কাটে, বাঘ মারে, ডাকাতি করে। যদি সমস্ত ক্ষতিকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যে প্রযুক্তিগুলো বেস্ট প্র্যাক্টিস করে উন্নত বিশ্বে, যেসবের উদাহরণ রয়েছে, সেসব ব্যবহার করে ক্ষতি প্রশমন করে যদি এমন প্রজেক্ট হয়, তাহলে এই প্রজেক্টকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। জীবিকার তাগিদে যেসব মানুষ সুন্দরবনের গাছ কাটে, ডাকাতিক করে এই লোকগুলোর একটা বিকল্প ব্যবস্থা হবে।
দেশের এত জায়গা থাকতে রামপালেই কেন বিদুৎকেন্দ্র করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ সাধারণ মানুষ বিদুৎতের আওতায় ছিল, শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন। আর সবাই বিদুৎ সেবার বাইরে ছিল। তখন যারা বিদুৎ পাচ্ছিলাম, তারাও দিনে ২৪ ঘন্টার ১২ ঘন্টার বেশি বিদুৎ পেতাম না। আমরা যাতে ২৪ ঘন্টাই বিদুৎ পাই এটা যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টার্গেট ছিল, পুরো বাংলাদেশের মানুষও যাতে বিদুৎ সেবার আওতায় আসে সেই পরিকল্পনাও ছিল। আর তা করতে গেলে পুরো দেশে বিদুৎ ছড়িয়ে দিতে হবে।
ধরুন, আমরা ঢাকার গুলাশানে রামপালের বিদুৎকেন্দ্রটি করলাম দক্ষিণ বঙ্গের জন্য, খুলনার জন্য, যেখানে নতুন নতুন বিদুৎ সংযোগ দিতে হবে। ঢাকায় উৎপাদন করে যদি খুলনায় নিই ট্রানমিশনের মাধ্যমে তাহলে কি ব্যয় কী পরিমাণ বাড়বে ভেবেছে কেউ? এখানে বিদুৎ উৎপাদন করলে তার একটা অংশ নষ্ট হবে। গোটা বিশ্বেই এটা প্র্যাক্টিস, যে এলাকায় বিদুৎ দিতে চাই, সে এলাকায় বা তার কাছাকাছি এলাকায় পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হয়, যাতে ট্রানমিশন কস্ট কম হয়।
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আমি আপনি এত বুঝি, আমার আপনার এত দরদ সুন্দরবন নিয়ে, শেখ হাসিনা বোঝেন না? বঙ্গবন্ধু কন্যার দরদ নেই? যে মানুষটি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রায় সকল ক্ষেত্রে, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার করছেন তার, অপশক্তিকে মোকাবিলা করছেনÑ বাংলাদেশ নিয়ে তার এত দরদ নেই। আমি আপনি এত বুঝি গেছি? সুন্দরবনের ক্ষতি করে এমন কিছু তিনি করবেন?Ñ রামপাল বিরোধীতাকারীদের কাছে আমার প্রশ্ন।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন