লেজার শোয়ের ছন্দে শুরু রিও অলিম্পিক
এল অর বাদল : গলফার সিদ্দিকুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকাটা উঁচু করে ধরা মাথার উপর। পেছনে সিদ্দিক-বাকিদের গায়ে আকাশী ব্লেজার আর ছাঁই রংয়ের প্যান্টে লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা এক এক করে পা রাখলেন মারাকানা স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় ৫.৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো ২০১৬ অলিম্পিক্সের। মারাকানা স্টেডিয়ামের দর্শকাসন প্রমাণ করে দিল অলিম্পিক ঘিরেও সমান উত্তেজিত ব্রাজিল তথা সারা বিশ্বের মানুষ। ঠিক যেনো ফুটবলের মতো। ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ের মধ্যে বিশ্বকাপ ফাইনালকে ছুঁয়ে ফেলল ২০১৬র অলিম্পিক। গ্যালারিতে এক লাখ ৯৯ হাজার দর্শক। ২০০৯ সালে ঘোষণা হয়েছিল ২০১৬ সালের অলিম্পিক হতে চলেছে ব্রাজিলের রিও’র জেনেইরোতে। সাত বছর পর গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের আলোয় ঝকমক করে উঠল রিও’র মারাকানা স্টেডিয়াম।
উদ্বোধন ঘোষণার পর পরই আতসবাজির রোশনাইয়ে ছেয়ে যায় মারাকানার আকাশ। এর মধ্যেই পলিনহো দা ভিয়োলার গলায় ব্রাজিল জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গেই আকাশ ছুঁলো ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা। লেজারের আলোয় তখন মারাকানার মঞ্চে জেগে উঠেছে ব্রাজিলের সমুদ্র সৈকত থেকে আমাজনের অভয়ারণ্য। ক্রমশ একটার পর একটা ছবি বদলের সঙ্গে রিও-র মারাকানা স্টেডিয়ামে লেখা হল ব্রাজিলের ইতিহাস। কী ভাবে ইউরোপিয়ানদের আগমণে বদলে গিয়েছিল ব্রাজিলের ভবিষ্যত। অলিম্পিকের আগমন। তার মধ্যেই জানা গেল ফুটবল লিজেন্ড পেলে হঠাৎ বেঁকে বসায় অলিম্পিক টর্চ জ্বালাবেন ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন গুলোভো কুয়ের্তেন। তখনও মঞ্চে বেজে উঠল বিখ্যাত ‘দ্য গার্ল ফ্রম ইপানেমা’। ১২ বছরের র্যাপার ততক্ষণে মাতিয়ে দিয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার দর্শককে। সুপার মডেল জিজেল বুন্দচেন র্যাম্প ওয়াক শুরু করতেই অলিম্পিক উদ্বোধনের রোশনাই যেন বেড়ে গেল কয়েকশো গুণ। আবার স্টেডিয়াম ঘিরে জ্বলে উঠল নানা রঙের আতসবাজি। শুরু থেকেই রিও-র সমুদ্র সৈকতের দূষণ নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে ব্রাজিল। অলিম্পিক উদ্বোধনের আসল থিমই ছিল সেই দূষণ প্রতিরোধ। তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হল ব্রাজিলের সুন্দর দিককে আরও সুন্দর করে তোলার স্বপ্ন। এর পরই দেশের পতাকা হাতে মঞ্চ আলো করতে নেমে পড়লেন অলিম্পিকের আসল যোদ্ধারা। অ্যাথলেটরা। ১৮৯৬ সালে প্রথম অলিম্পিক আয়োজন করেছিল গ্রিস। পরম্পরা মেনে প্রথম প্যারেডটি করে সেই দেশই। এর পর এক এক করে দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, জার্মানি, আলবেনিয়া, স্পেন, ফ্রান্স…। ১৪ বারের গ্র্যান্ডসøাম জয়ী রাফায়েল নাদাল মঞ্চে আসতেই উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙল।
গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে পরের মঞ্চ মাতালেন ২০১২ অলিম্পিকের সোনা জয়ী টেনিস তারকা অ্যান্ডি মারে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গেল জ্যামাইকান অ্যাথলেট উসাইন বোল্টের আগমন। জ্যামাইকা নামতেই স্টেডিয়ামে ইকো হল বোল্টের নাম। এই সবের মধ্যেই রাশিয়া দেশের পতাকা হাতে নামতে পারল না অলিম্পিক মঞ্চে। অলিম্পিকের পতাকা হাতে মঞ্চে এল দুটো দল। রাশিয়া ছাড়া এই প্রথম উদ্বাস্তুদের নিয়ে তৈরি দল এল অলিম্পিকেরর পতাকা হাতে।