নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোই বিভিন্ন হামলায় জড়িত
আজাদ হোসেন সুমন : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় ৬টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের নেতারাই আত্মগোপনে থেকে দেশে নাশকতার ছক আঁটছে। এদের নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দিতে র্যাব পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো হচ্ছে- হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), শাহাদাত-ই-আল হিকমা ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ। এ জঙ্গি সংগঠনগুলোই গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাসহ বিভিন্ন নাশকতায় যুক্ত রয়েছে।
২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শাহাদত-ই-আল হিকমাকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই সংগঠনের সদস্যরা এখনো তৎপর। সংগঠনটি পরিচালনা করছেন অ্যাডভোকেট রাশিদুল আলম দুলাল। তিনি বাংলাদেশেই আত্মগোপনে আছেন। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমজেবি ও জেএমবিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরাও আন্ডারগ্রাউন্ডে নাশকতার ছক আঁটছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। জেএমবি পরিচালনা করছেন মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা সায়েম, সোহেল মাহফুজ ও মাওলানা ওসমান গনি। তাদের মধ্যে মুস্তাফিজুর, মাহফুজ ও সায়েম ভারতে অবস্থান করছেন। একই বছরের ১৭ অক্টোবর হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশকে (হুজিবি) নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠনের মূলনেতা মুফতি হান্নান কারাগারে থাকলেও আরেক নেতা মুফতি শফিকুর রহমান পাকিস্তানে থেকে বাংলাদেশের কাজ পরিচালনা করছেন।
হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সক্রিয় আছে হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা। সূত্র মতে, সংগঠনটি পরিচালনা করছেন মোস্তফা মিনহাজ। তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এই সংগঠনের আরেক নেতা অর্থ সংগ্রাহক মাওলানা মহিউদ্দিনকে এর আগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সে প্রায় ১ বছর আগে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৫ মে সরকার আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) কে নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ ঘোষণার কিছুদিন পরই আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ নামে তারা আত্মপ্রকাশ করে। তারপর এই জঙ্গি সংগঠনটি একের পর এক ব্লগার হত্যা করে। এদের দলনেতা জসিম উদ্দিন রাহমানী জেল হাজতে আছে। নেপথ্যে থেকে বরখাস্তকৃত মেজর জিয়া এ সংগঠন পরিচালনা করছেন বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য আছে। গত মঙ্গলবার পুলিশের আইজিপি মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে দাবি করে মাঠপর্যায়ে কর্মরত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের অর্থনীতিকে বলেছেন, এটা এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে-আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে কঠিন ব্যাপার। স্কুল কলেজে, পাড়া মহল্লায় এ ব্যাপারে সমষ্টিগতভাবে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আসলে যারা সুইসাইডাল স্কোয়াড-তাদেরকে ঠেকানো কঠিন, আমরা কেন, উন্নত বিশ্বের সর্বোচ্চ দেশগুলোও এদের ঠেকাতে পারছে না। সুতরাং নাশকতা এড়াতে আমাদের যথেষ্ট সোর্স আছে এবং আমরা জান-জীবন দিয়ে কাজ করছি। ফলে অনেকটা সফল। তিনি বলেন, আমাদের নেটওয়ার্ক এখন দেশজুড়ে এমনভাবে বিস্তৃত আছে যে, জঙ্গিরা আর সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের ছেলেরা যাতে জঙ্গিবাদে ঝুঁকতে না পারে সেজন্য অভিভাবক, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম