ব্লগার নিলয় হত্যা তদন্তেই বছর পার
মামুন খান : রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আলোচিত ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল হত্যার আজ এক বছর পূর্ণ হলেও মামলার তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। বছর ধরে তদন্ত করেও প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নিত করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। এরইমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এ পর্যন্ত আদালতের ৩৬টি ধার্য তারিখ পার হয়েছে। এতে অগ্রগতি না থাকায় বাদীও মামলার খোঁজ-খবর নেওয়া বাদ দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্লগার নিলয় নীল হত্যামামলার উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এখনও মামলার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তাই তথ্য-প্রমাণ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত চার্জশিট প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এছাড়া এ মামলায় সাতজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে চারজন নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। রাজধানীর উত্তরায় আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন হত্যাচেষ্টা মামলারও আসামি। আসামিদের রিমান্ডে এনে কিছু তথ্যও পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য পাওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। একজন আসামি এখনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।’
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর গোড়ানে বাসায় ঢুকে ১০ মিনিটের মধ্যে চার দুর্বৃত্ত নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়কে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় নিলয়ের স্ত্রী আশামনি অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। ঘটনার সময় অজ্ঞাত আসামিদের মধ্যে একজনের বয়স ২০/২১ বছর এবং আরেক জনের বয়স ৩০/৩৫ বছর ও তার মুখে দাঁড়ি ছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
পিরোজপুর জেলার সদর থানার চলিশা গ্রামের মো. সামসুদ্দিনের ছেলে নিলয়। তিনি একজন এনজিও কর্মীর পাশাপাশি ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজধানীর খিলগাঁও পূর্ব গোড়ানের এক ভাড়া বাসায় (এপি-বাসা নং-১৬৭, রোড নং-৮, ৫ম তলা) দুবছর স্ত্রী নিয়ে ছিলেন। পরে স্বামীর মৃত্যুর পর ওই বাসা ছেড়ে চলে যান আশা মনি। এরপর দীর্ঘদিন তার কোনো খোঁজ নেই, মোবাইলফোনও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলার বাদীর সঙ্গে বেশকিছু দিন ধরে যোগাযোগ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি (আশা মনি) ভারতে চলে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। ভারত থেকে এসেছেন কিনা তাও জানাননি।’
সূত্র মতে, ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটে। এসব হামলা এত বেশি নিখুঁতভাবে হয় যে, ঘাতকদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার অভিজিৎ রায়, মার্চে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, মে মাসে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ এবং আগস্টে ব্লগার নিলয় হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। হত্যাকা-ের আগে হুমকি ও হত্যার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল-কায়েদা, আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়। এরপরও শুধু ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যামামলার চার্জশিট ছাড়া বাকি মামলাগুলোর কোনো কুলকিনারা হয়নি।
এ মামলায় গ্রেফতারকৃত সাত আসামির মধ্যে মাওলানা মুফতি আব্দুল গাফ্ফার, মো. মর্তুজা ফয়সাল শাকিব, মো. কাওসার হোসেন সরদার, মো. কামাল হোসেন সরদার ও সাদ আল নাহিদ কারাগারে রয়েছেন। বাকি দুই আসামি মো. মাসুম রানা ও মো. তারিকুল ইসলাম জামিনে আছেন। এদের মধ্যে সাদ আল নাহিয়ান ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সম্পাদনা : আ. হাকিম