স্থায়ী কমিটিতে নতুন দুই মুখ সাড়ে ৪ মাস পর বিএনপির জাতীয় কমিটি ঘোষণা
শাহানুজ্জামান টিটু : কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রায় সাড়ে চার মাস পর দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি (আংশিক), নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করেন তিনি। এতে নতুন করে দুজন জায়গা পেয়েছেন। তারা হলেনÑ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। পদাধিকারবলে এই কমিটির সদস্য হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। পরে এই দুটি পদে নাম ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন এবং ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৪৯৮ জনের নাম জানান মির্জা ফখরুল। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ জায়গা পেয়েছেন ১১৩ জন।
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য : চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (পদাধিকারবলে), সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পদাধিকারবলে), খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (পদাধিকারবলে), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ (নতুন)।
ভাইস চেয়ারম্যান : সংবাদ সম্মেলনে ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের নাম প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। এদের বেশির ভাগই আগের কমিটিতে একই পদে ছিলেন। তারা হলেনÑ বিচারপতি টিএইচ খান, এম মোরশেদ খান, হারুন আল রশীদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, রাবেয়া চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আবদুল মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মো. নাছির উদ্দিন, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আবদুস সালাম পিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ওসমান ফারুক, রুহুল আলম চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ।
নতুন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য : সারোয়ারি রহমান, রিয়াজ রহমান, হারুনার রশীদ খান মুন্নু, মুশফিকুর রহমান, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফজলুর রহমান পটল, কবির হোসেন, উকিল আবদুস সাত্তার, লুৎফর রহমান খান আজাদ, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী মাজহারুল আনোয়ার, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেইন, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, জাফরুল হাসান, জয়নুল আবদীন ফারুক, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), মনিরুল হক চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ফজলুল হক আসপিয়া (সুনামগঞ্জ), নুরুল হুদা (চাঁদপুর), সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, আবদুল হালিম, এম এ কাইয়ুম, শহীদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সুজাউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রশীদ, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, অধ্যাপিকা তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, অ্যাডভোকেট রেজ্জাক খান, রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, কাজী আসাদ, কবির মুরাদ, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, একরামুজ্জামান, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নাজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদীর লুনা (নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী), ড. ইনামুল হক চৌধুরী, ডা. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, সঞ্জীব চৌধুরী, আবদুল হক (সিলেট), অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, অ্যাডভোকেট কামরুল মুনির, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল বায়েস ভুঁইয়া, আফরোজা খান রীতা, আবদুস সালাম (ঢাকা মহানগর), মইনুল ইসলাম শান্ত, মো. শাহজাদা মিয়া, এসএস ফজলুল হক, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এম এ লতিফ, ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস, সৈয়দ আলমগীর হোসেন এমবিএ ও আমিনুল হক এফসিএ।
জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে উল্লেখযোগ্যরা : দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার অধীনে সহ-দফতর সম্পাদক করা হয়েছে তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন (স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি) ও বেলাল আহমেদকে।
প্রচার সম্পাদক হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তার তিন সহ-সম্পাদক হচ্ছেন আমীরুল ইসলাম আলীম, আসাদুল করীম শাহিন ও শামীমুর রহমান শামীম। কোষাধ্যক্ষ পদে মিজানুর রহমান সিনহার নাম আগেই জানানো হয়েছিল। উপ-কোষাধ্যক্ষ হিসেবে এখন মাহমুদুল হাসান বাবুর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ সম্পাদক করা হয়েছে আসাদুজ্জামান রিপন ও আবু নাসের মো. ইয়াহিয়া।
নতুন পদ সৃষ্টি : কমিটিতে ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক, কর্মসংস্থানবিষয়ক, বাণিজ্যবিষয়ক, গবেষণাবিষয়ক এবং তথ্যবিষয়ক’ পাঁচটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। লায়ন হারুনুর রশীদকে ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক, এম এ কাইয়ুমকে ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক, আবদুল মালেককে প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক, আজিজুল বারী হেলালকে তথ্যবিষয়ক সম্পাদক, সালাহউদ্দিন আহমেদকে (ডেমরার সাবেক সংসদ সদস্য), বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, জাকারিয়া তাহের সুমনকে কর্মসংস্থানবিষয়ক এবং আবু সাঈদ খান খোকনকে গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পূর্বঘোষিত ১১টি পদের মধ্যে চট্টগ্রামের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে শাহাদাত হোসেন পদত্যাগ করায় তার স্থলে মাহবুবুর রহমান শামীমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পাদকের সাতটি পদের মধ্যে পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- এহছানুল হক মিলন, মাহিদুর রহমান, নাসির উদ্দিন অসীম, নওশাদ জমির ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। সহ-সম্পাদকরা হলেন- হুমায়ুন কবীর, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, রুমিন ফারহানা, বেবী নাজনীন ও শাকিরুল ইসলাম শাকিল।
আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীকে পল্লী উন্নয়ন, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতনকে সমাজ কল্যাণবিষয়ক, আসাদুজ্জামান আসাদকে মানবাধিকারবিষয়ক, ফরিদ হোসেন মানিককে প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামকে ক্রীড়াবিষয়ক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নাল আবেদীনকে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক, নুরে আরা সাফাকে মহিলাবিষয়ক, চিত্রনায়ক আশরাফ হোসেন উজ্জ্বলকে সাংস্কৃতিকবিষয়ক, ম্যা ম্যা চিংকে উপজাতিবিষয়ক, বদরুজ্জামান খসরুকে ধর্মবিষয়ক এবং অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামকে শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
কণ্ঠশিল্পী মনির খানকে করা হয়েছে সহ-সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক। সহ-ধর্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন দীপেন দেওয়ান, জন গোমেজ, অমলেন্দু অপু, আব্দুল বারী ড্যানী। মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে সুলতানা আহমেদকেও রাখা হয়েছে। যুব ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
নেতাদের স্বজনদের মধ্যে যারা কমিটিতে : কমিটিতে ১১৩ জন নতুন মুখ স্থান পেয়েছেন। এরমধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের স্বজনরা রয়েছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। এছাড়া স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর পুত্রবধূ নিপুর রায় চৌধুরীও রয়েছেন কমিটিতে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাও রয়েছেন। কারাবন্দি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এবারও নির্বাহী কমিটিতে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির আগের স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সারওয়ারী রহমান ও শামসুল ইসলাম। তবে এর মধ্যে সারওয়ারী রহমানকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে শামসুল ইসলাম শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এ ছাড়া আগের কমিটির সদস্য আর এ গণি ও মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। আরেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ কাউন্সিলের পর তিন দফায় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ৪২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম