এস এম নূর মোহাম্মদ: নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পুলিশের প্রতিবেদন গতকাল রোববার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চ।
এর আগে ২ আগস্ট ওই প্রতিবেদন নারায়ণগঞ্জের আদালতে দাখিল করেছিল পুলিশ।
ওই প্রতিবেদেনে শ্যামল কান্তির বক্তব্যে বলা হয়, ‘এ ঘটনা আকস্মিক। এজন্য কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই।’ এছাড়া নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদনেও সেলিম ওসমানের জড়িত না থাকার কথা বলা হয়। ১১ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘জনতার দাবির প্রেক্ষিতে ওই ঘটনা আকস্মিক ঘটেছিল।’
তবে আদালতে উপস্থিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী আবু ওবায়দুর রহমান বলেন, আসক থেকে শ্যামল কান্তির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এবং তদন্ত করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির শিকার এমন বক্তব্য শ্যামল কান্তি দেননি। তখন আদালত আসকের আইনজীবীকে বলেন, আপনারা তো আলাদা তদন্ত করেছেন। তাহলে ওই তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট আকারে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে আদালতে জমা দেন।
গতকাল আদালতে জমা দেওয়া শ্যামল কান্তির বক্তব্যে দেখা যায়- তিনি পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘গত ১৩ মে ১০টার সময় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিষয়ক ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেয়- আমি ইসলাম ধর্ম নিয়া কটূক্তি করেছি। মাইকে ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় জনগণ মারমুখী হয়ে বিদ্যালয়ের দিকে ছুটে আসে। ম্যানেজিং কমিটির লোকজন উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। লোকজন বেশি হওয়ায় কমিটির লোকেরা সামলাতে না পেরে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের জানান। এরপর স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান বিদ্যালয়ে আসলে উশৃঙ্খল জনতা উত্তেজিত হয়ে আমার বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে এবং আমাকে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরাতে ও কান ধরে ওঠবস করানোর দাবি করে। ’
তিনি বলেন, ‘উশৃঙ্খল জনতার দাবির প্রেক্ষিতে এবং তাদের শান্ত করার জন্য ওই উদ্ভূত কান ধরে ওঠবস করার ঘটনাটি আকস্মিকভাবে ঘটে। এতে উশৃঙ্খল জনতা কিছুটা শান্ত হয়। আমি ও এমপি সেলিম ওসমান উদ্ভূত ঘটনায় পরিস্থিতির শিকার। একটি মিথ্যা গুজব ঘটনার কারণে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ঘটেছিল। এতে আমি কাউকে দোষারোপ করছি না এবং এ ঘটনায় আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং পুলিশ বা আদালতে কোনো অভিযোগ বা মামলা করবো না।’
প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি আইনজীবী এম কে রহমান আদালতের নজরে আনলে গত ১৮ মে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সম্পাদিত: আ. হাকিম