* গুলশান হামলার অস্ত্র আসে ভারতের বিহারের পাটনা থেকে
* দুবাই থেকে ‘হ্যান্ড পেমেন্ট’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়
* অমুসলিম এক ব্যবসায়ী হুন্ডির টাকা গ্রহণ করে
বিপ্লব বিশ্বাস : হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার জন্য অস্ত্র ক্রয়সহ আনুষাঙ্গিক খরচের টাকা এসেছিল দুবাই থেকে। দুবাই প্রবাসী এক পাকিস্তানি তিন দফায় হুন্ডির মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে ৩০ লাখ টাকা পাঠান। ঢাকার একজন অমুসলিম হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এ অর্থ পৌঁছে যায় জঙ্গিদের হাতে। টাকা গ্রহণ করেন সাব্বির ওরফে চকলেট নামে নতুন ধারার জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক ক্যাডার। গুলশান হামলা মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, ওই অর্থ দিয়ে হামলার জন্য অস্ত্র কেনা হয় ভারতের বিহার রাজ্যের একটি গোপন কারাখানা থেকে। প্রতিটি একে-২২ মেশিনগান কিনতে জঙ্গিদের খরচ পড়ে ৯০ হাজার টাকা। ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনায় টাকা পাঠানোর প্রমাণও মিলেছে তদন্তে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটি ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গুলশানে হামলাকারীদের অর্থের উৎস জানা গেছে। কারা কিভাবে কোন মাধ্যমে এসব টাকা পাঠিয়েছে এবং কারা গ্রহণ করেছে সেটাও জানা গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।’
তদন্ত সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার দিন ১ জুলাই ছিল ২৫ রমজান। রোজার মধ্যেই গুলশানে হামলাকারীদের কাছে ৩ দফায় টাকা পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই থেকে। এর মধ্যে প্রথম দফায় পাঠানো হয় ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও তৃতীয় দফায় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুবাই থেকে ‘হ্যান্ড পেমেন্ট’ পদ্ধতি অনুসরণ করে এ অর্থ চলে আসে সরাসরি রাজধানীর এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে। অমুসলিম ওই হুন্ডি ব্যবসায়ী ওই অর্থ গ্রহণ করেন। তার কাছ থেকে এই টাকা বুঝে নেন সাব্বির ওরফে চকলেট।
সূত্র আরও জানায়, ওই অমুসলিম হুন্ডি ব্যবসায়ীর জানা ছিল না এগুলো জঙ্গিদের জন্য পাঠানো অর্থ। তার ধারণা ছিল সাব্বিরের প্রবাসী আত্মীয়রা এ টাকা পাঠাচ্ছেন। তদন্তের স্বার্থে গোয়েন্দারা তার নাম প্রকাশ করেননি। টাকা গ্রহণকারী সাব্বিরকে গোয়েন্দা জালে আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি নিজেকে নতুন ধারার জেএমবি সদস্য হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। গুলশান হামলায় জঙ্গিরা ৫টি নাইন এমএম পিস্তল, তিনটি একে-২২ মেশিনগান ব্যবহার করে।
গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, একে-২২ মেশিনগান ও নাইন এমএম পিস্তলের অধিকাংশই ভারতের বিহার রাজ্যের একটি গোপন কারখানায় তৈরি হয়। প্রতিটি একে-২২ মেশিনগান ক্রয়ে তাদের খরচ পড়ে ৯০ হাজার টাকা। অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনায় অর্থ প্রেরণের তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সম্পাদনা : রিমন মাহফুজ