
হিযবুত তাহরীরের ৯ বহিষ্কৃত ছাত্র-শিক্ষক এখন কোথায়? জিয়া-মহিউদ্দিন একই ছাতার তলে!
বিপ্লব বিশ্বাস : হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ ও গোলাম মাওলা এখন কোথায়- তা জানে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু তাই নয়, ঢাবির জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বহিস্কত সাত ছাত্রই বা কোথায় সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। পরিবার নিয়ে এদের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারলেও সঠিক অবস্থানের তথ্য দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দাদের ধারণা, জিয়া-মহিউদ্দিন কি একই ছাতার নিচে অবস্থান করে জঙ্গি হামলার দিক নির্দেশনা দিচ্ছে।
সূত্রমতে, মহিউদ্দিন আত্মগোপনে রয়েছেন এবং গোলাম মাওলা নিজ কর্মস্থলে কমর্রত আছেন। সম্প্রতি জঙ্গি হামলায় কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখা উচিত নয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর আমজাদ আলী জানিয়েছেন, ওই ৭ শিক্ষার্থীসহ দুই শিক্ষকের উপর কঠোর নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের কক্ষগুলোতে গিয়ে হিযবুত তাহরীরের লিফলেট ও সিডি বিতরণ করেন ৭ ছাত্র। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তদন্ত করে ওই ৭ ছাত্রকে চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রদের নামে থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। বহিষ্কার হওয়া ৭ ছাত্র হলেন- আলম মো. শিহাব উদ্দিন ও সাঈদী হাসান সজীব, নাকিব ফারহান, আলমগীর হোসেন, তারিকুল ইসলাম, মো. সোলাইমান ও আব্দুল মতিন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও জানায়, পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলে তাদের সবাইকে আটক করে। ৭ ছাত্রের মধ্যে ৫ জন জামিনে মুক্ত আছেন। বাকি দুজন কারাগারে রয়েছে। দুই ছাত্রের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. সোলাইমান। অন্যজন আব্দুল মতিন, যিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে, হিযবুত তাহরীর প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষক মহিউদ্দীন আহমেদ ২০১০ সালে গ্রেফতার হন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান বলে পুলিশের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, মহিউদ্দীন আহমেদ জামিনে মুক্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর সরকার হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে মহিউদ্দীনকে আর কর্মস্থলে দেখা যায়নি। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তাও জানেন না এ বিভাগের কেউই।
সূত্রমতে, হিযবুত তাহরীরের অন্য এক উপদেষ্টা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলাকে ২০১০ সালের ৮ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ এলিফ্যান্ট রোড থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হলেও তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হয়ে পরে জামিনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রের মধ্যে নূরে আলম মো. শিহাব উদ্দিন ও সাঈদী হাসান সজীব দুজনেই ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র ছিলেন। নাকিব ফারহান, আলমগীর হোসেন এবং তারিকুল ইসলাম অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র নূরে আলম মো. শিহাব উদ্দিনের স্থায়ী ঠিকানা জামালাপুরে। শিহাবের বাবা তোজাম্মেল হোসেন জানান, বর্তমানে শিহাব তার বড় বোনের বাসা ঢাকার হাজারীবাগে থাকেন। তিনি এখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শ্রেণিতে পড়ছেন। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন জানতে চাইলে তিনি তা জানেন না বলে জানিয়েছেন। পরেই আবার তিনি বলেন, আমার ছেলে এখন আর পড়াশোনা করে না। সে তার বোনের বাসায় থাকে এবং চাকরি খুঁজছে, পাশাপাশি টিউশনি করে।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আরেক ছাত্র সাঈদ হাসান সজীবের স্থায়ী ঠিকানা টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায়। তারা তাদের গ্রামের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু কোথায় গিয়েছেন সেটাও কেউ জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন নাকিব ফারহান। স্থায়ী বহিষ্কার হওয়ার পর তাকে আর হলে দেখা যায়নি বলে জানায় সূর্যসেন হল কর্তৃপক্ষ। নাকিবের স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামের ঘাট ফারহাবাদের কাজেম আলী রোডের গুলিস্তান হাইটসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় বছরখানেক আগে তারা কোনো এক অজানা কারণে ওই বাড়ি থেকে চলে গেছেন। জানা যায়, নাকিবের পরিবার মূলত পাকিস্তানি। তাদের ওই ভবনের যারা থাকেন, তারা সবাই পাকিস্তানি বলে জানা গেছে। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বহিষ্কৃত ছাত্র তারিকুল ইসলামের বাড়ি রাজধানীর খিলগাঁও। খোঁজ নিতে গিয়েও তাদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, বহিষ্কৃত ছাত্র আলমগীর হোসেনের স্থানীয় ঠিকানায় খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একটি সূত্র বলেছে, সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃৃত মেজর জিয়ার সঙ্গেই আছেন হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। তারাই সম্প্রতি সময়ে জঙ্গিদের মাস্টার মাইন্ড হিসাবে কাজ করছে। তাদের নেতৃত্বে এবং তাদের দিক নির্দেশনায় সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি হামলা হয়েছে। তারা আরও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে বলে সূত্রটি বলছে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম
