
কমিটি ঘোষণার পর উচ্ছ্বাসহীন বিএনপি
শাহানুজ্জামান টিটু : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা নেই কোনো আনন্দ বা উচ্ছ্বাস। কমিটি ঘোষণার পরদিন নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া দায়িত্বশীল কোনো নেতা আসেননি রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ফলে নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে কার্যালয় ছিল দিনভর ফাঁকা। কমিটি ঘোষণার পরদিন কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে এমন আশায় সকাল থেকেই প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা সেখান উপস্থিত হয়।
গতকাল রোববার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদিনে কার্যালয়ে এসেছেন নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া তিন সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ। তাদের ঘিরে কিছু নেতাকর্মীরও আগমন ঘটে। তারা দাফতরিক কিছু কাজকর্মও করেন। এরপর আসেন নির্বাহী সদস্য খালেদা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে কার্যালয়ে আসেন নির্বাহী কমিটির নতুন তিন সদস্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা ওমর ফারুক সাফিন, আবু বকর সিদ্দিক ও ওবায়দুল হক নাসির। সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনও আসেন। তবে বিকেলের আগেই তারা সবাই কার্যালয় ত্যাগ করেন।
কিন্তু ভিন্ন চিত্র ছিল কাউন্সিলের পর তিন দফায় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ৪২ জনের নাম ঘোষণার পর। কাউন্সিলের ১০ দিন পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ওই সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, মিষ্টি মুখ ও নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। একপর্যায়ে ফুলেল শুভেচ্ছা নেওয়া বন্ধ করে দেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ভাটা পড়েছে সেই উচ্ছ্বাসে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ পাওয়ার লক্ষ্যে তদবির করতে নেতাকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয়ে আসতেন। শুধু ঢাকা নয়, সমগ্র দেশ থেকেই আসতেন তারা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর একেবারে বিপরীত চিত্র। বিশাল কমিটি দেওয়া হলেও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ নেতারা কেউ নয়াপল্টন কার্যালয়ে আসেননি। পদ পাওয়ার পরও নেতারা যে সন্তুষ্ট না সেটারই বহিঃপ্রকাশ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে না আসা বলে মন্তব্য করেছেন সেখানে উপস্থিত এক মধ্যমসারির নেতা।
এদিকে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিশ্লেষণ চলছে তৃণমূলেও। অনেক দেরিতে হলেও কমিটি ঘোষণায় খুশি অনেকেই। তারা মনে করেন, এখন গতি আসবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। কারও কারও কণ্ঠে আবার ক্ষোভও ছিল। রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন বলেন, কাউকে যায়গা ছেড়ে দিতে হবে, নতুনদের যায়গা দিতে হবে। এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ম্যাডামের নেতৃত্বে এটাকে আমরা উৎরে যেতে পারব।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান নেতৃত্বে তারা তাদের দায়িত্বে সচেতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে জোড়ালো এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বরিশাল জেলা বিএনপি (দক্ষিণ) এর দফতর সম্পাদক মন্টু খান বলেন, আগামীতে কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের যে ধরনের আন্দোলন সংগ্রামের নির্দেশনা দেবে আমরা তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ নির্দেশনা মোতাবেক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।
সময় উপযোগী ও আন্দোলনমুখি হলেও সৎ ও ত্যাগী নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে যায়গা পায়নি বলে অনেকের আক্ষেপ। বরিশাল মহানগর বিএনপির সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, যারা ত্যাগী, সৎ এবং সংগঠক বরিশাল মহানগর এবং বরিশাল জেলা থেকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
নির্বাহী কমিটিতে একাধিক নেতা পদ পেলেও হতাশায় ভুগছেন খুলনার নেতারা। কমিটিতে নতুন করে কেউ স্থান না পাওয়া এবং পুরাতনদের পদোন্নতি না হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ বলে জানা গেছে। ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রাম কমিটির নেতাকর্মীরা। এর ফলে দলকে সংগঠিত করার বদলে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে দলীয় কোন্দল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
