
বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে বিশ্বাসী ছিলেন বঙ্গবন্ধু
দীপক চৌধুরী : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেনÑ বাঙ্গালির চিরায়ত সংস্কৃতির যে ধারা হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে এক সুতায় বেঁধে রেখেছে এর বাইরে যাওয়া উচিৎ নয়। এ জন্যই বাঙলা সংস্কৃতির ধারাকে আরও মজবুত করার জন্য তিনি বলেছেন, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ পাঠ করে বাংলা সংস্কৃতির এমন মূল্যায়ন পাওয়া যায় তার বিভিন্ন উক্তিতে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় ও সাংস্কৃতিক অপঘাত বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-।
স্বধীনতা উত্তর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান ছিলÑ দেশের সাধারণ মানুষ, যারা আজও দুঃখী, যারা আজও নিরন্তর সংগ্রাম করে বেঁচে আছে, তাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখকে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপজীব্য করে তুলতে হবে। শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের দায়িত্ব নিতে হবে। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুখ, শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্খাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।
বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির উপরও গুরুত্ব প্রকাশ করেছেন তার ভাষণে। তার ভাষায়, বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্তÑ শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না।
জাতির পিতা বলেছেন, এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের আমার যুবক শ্রেণি আছে চাকরি না পায় বা কাজ না পায়। আমাদের চাষীরা হল সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণি এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্যে আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। ড. রেহমান সোবহানের ‘বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়’ গ্রন্থে পাওয়া যায়Ñ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে; মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে; খ্রিস্টান-বৌদ্ধ যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না? রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে বাংলার মানুষ তাকে প্রত্যাঘাত করবে।
দলমত নির্বিশেষে সব মানুষকে তিনি আঙ্গুল উঁচু করে সতর্ক করে দিয়ে বলতেন, সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম
