চামড়াশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, রপ্তানির কী হবে?
রবিউল আলম
কোরবানি আসে কোরবানি যায় প্রতিবারের মতো। এবারও কোরবানি আসবে ত্যাগের মহিমা নিয়ে। কোরবানি শুধু কোরবানি নয়Ñ ত্যাগের, আত্মোৎসর্গের, উদারতার, সমতার এক মহান অধ্যায়। ইসলামের সৌন্দর্য। গরিব দুঃখী মানুষ অপেক্ষা করে আছে, একটু মাংসের আশায়। মিসকিন, এতিমখানা, লিল্লাহবোডিংÑ দেশের এমন অসহায় মানুষগুলো অপেক্ষা করে আছে কোরবানির গরু, ছাগলের চামড়া বিক্রির টাকার আশায়। চামড়াওয়ালা, ট্যানারির মালিক, মাংস শ্রমিকেরা চেয়ে আছে অতি মুনাফার আশায়। ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রালয়, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের এই তৃতীয় রপ্তানিখাত চামড়া শিল্প রক্ষায়। সংবাদ মাধ্যম প্রস্তুত চামড়া নিয়ে টানাটানি, মাস্তানি, সিন্ডিকেট, পাচারকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে। সংবাদকর্মীরা নিজেদের আরামকে হারাম করে ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে, দেশ ও জাতির স্বার্থে অন্যায় অবিচারের চিত্রগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরবেন। প্রতিবছরই দায়িত্বশীল গণমাধ্যম এই চেষ্টাটিই করেন। এ বছরও তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন, এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। কিন্তু এই প্রচার, সচেতনতা চামড়া রপ্তানিকারক ট্যানারির মালিকদেরকে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে পেরেছি কি?
সরকার চামড়া শিল্প উন্নয়নে হাজার কোটি টাকা খরচ করে হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলেছে। ২৮ বার নোটিশ দিয়ে, হাইকোর্ট জরিমানা করে তাদেরকে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পারছে না, শুধু ব্যবসায়ীক দিক থেকে তারা অবিচল, সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। জনগণের অর্থ, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চামড়ার ব্যাপারি, মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার চামড়া বাকি নিয়ে তারা শিল্পপতি হয়েছেন। এখন শিল্প রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে! কী বিস্ময়! মালিকরা শুধুই শিল্পপতি। তারা শুধুই টাকা গুনবেন। দেশ-বিদেশ বেড়াবেন। যেখানে ইচ্ছা চামড়ার পচা গলা ফেলবেন, পরিবেশের বারোটা বাজাবেন, শিল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা নিবেন। শুধু ভালো ভালো বড় বড় কথা বলবেন। আইন, জনগণ, সরকার তাদেরকে কিছু করতে পারবে না। এ সত্য আর কেউ জানুক আর নাই জানুক ট্যানারি মালিকেরা নিজেরা জানেন। ট্যানারির ব্যবসায় আসার আগে যে কয় টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেই টাকার কয়েকশ গুন টাকা সরকার ও জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে বিদেশে পাচার ও অন্যান্য ব্যবসায় অন্যের নামে তুলে নিয়েছেন। এখন সরকার ট্যানারির পচা গলা ও বাতিল মেশিনারিজ নিয়ে ট্যানারির মালিকদের ঋণ মুক্তি দিলে ক্ষতি কি। এ আশা অনেক শিল্পের মালিকের। এতে তারা বরং বেঁচে যান।
এই কোরবানিতেও তারা হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, লালবাগে যানজট সৃষ্টি করে, বাণিজ্য মন্তণালয়ের অনুমতি নিয়ে, নিজেরা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্যানারির মালিকদের সংগঠন এককভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করার অধিকার ও বৈধতা রাখেন কিনা?
এতিমের হক, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে নেওয়ার অনেক কৌশল জানা আছে তাদের, হাইকোর্ট আর কত টাকা জরিমানা করবে, আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব ওদের কিছুই করার যাবে না, ভাবখানা এমন। আগামী ১০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় আমি আমন্ত্রণ পেয়েছি, জানি না দেশ ও জাতির স্বার্থে কিছু বলতে পারব কিনা। তবু আশা নিয়ে অংশগ্রহণ করব। দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, তুলে ধরবÑ এমনই প্রত্যয়।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন