ঘণ্টা বাজার আগেই সতর্ক হতে পারবেন তো?
অজয় দাশগুপ্ত
মাঝে মাঝে মনে হয় ক্ষমতা হলো বদহজম আর মন্ত্রীরা তার চোঁয়া ঢেকুর। এটা সবাই জানেন, দেশে এখন মানুষ বড় বিপন্ন। সবকিছু চলছে আবার থমকে আছে। আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা যতটা ভয় পাই দেশের ভেতরের মানুষ ততটা পায় না। এ না পাবার কারণ কি সমস্যা কম? না আমরা যা ভাবছি তা সঠিক কিছু না? আসলে সমস্যা আরও গভীর। মানুষ বাঁচার তাগিদে দাওয়াত করছে, দাওয়াতে যাচ্ছে, অনুষ্ঠান হচ্ছে। জীবন চলমান বলে এসবও সচল। কিন্তু যে দানব ঘাড়ের ওপর তার বল কি কমছে?
শুরুতে মন্ত্রীর কথায় আসি। এখন মানুষের দরকার আশার কথা। যারা দেশ চালায় তাদের মুখের কথা এখন মোটেও দামী নয়। তাদের কথা ও কাজের গরমিলে মানুষ ভয়ানক বিরক্ত। একদা মন্ত্রী মানে সমাজে, রাষ্ট্রে পরিচিত ভরসার কেউ একজন। এখন সে মান তলানীতে এসে ঠেকেছে। এমনও শুনি, তাদের পাহারায় থাকা পুলিশ সেপাইরাও নাকি এদের ধমক দিয়ে কথা বলে। পাত্তাহীন এসব মন্ত্রীরা সব হারিয়ে মিডিয়া নির্ভর একশ্রেণির প্রাণীতে পরিণত হয়েছেন। তাদের কথায় আশাবাদ বা ভরসা তো নেই-ই বরং হতাশার রাস্তা খুলে দেন তারা।
এই যে অর্থমন্ত্রী বললেন, রিজার্ভের চুরি যাওয়া টাকার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে তার ইন্টারেস্ট গ্রো করছে না, এটা কি সরকারের ইমেজের সহায়ক? কত কত ইস্যুতে এমনিতেই লেজে গোবরে হাল। বিরোধিদল নেই বলে অনেক বিষয় চাপা পড়ে আছে। রিজার্ভের টাকাও তেমনি বিষয়। এগুলো আজ হয়তো চাপা একদিন বেহাতে পড়লে এর জন্য অনেকের দশা চুলে জেল দেওয়া বাবর বা বিলেতে থাকা যুবরাজের মতো হবে। কারও লাইফ শেষ আর কেউ দেশে ঢুকতে পারবে না। এটা আমরা বুঝতে পারলে বয়সী মেধাবী ঝানু মন্ত্রী বোঝেন না? আসলে সবারই ক্ষমতার চোঁয়া ঢেকুর ওঠে। কেউ বলে দেয়, কেউ লুকিয়ে রাখে।
অথচ দেশে এখন ভয়ংকর এক বাস্তবতা বিরাজমান। তাহমিদ নামের যে ছেলেটিকে জঙ্গিপনার দায়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার নেগেটিভ পপুলারিটি দেখেন। ফ্রি, তাহমিদ নামের পেইজে লাইকের সংখ্যায় সেলিব্রেটিরাও ভড়কে যাবেন। তো এর মানে কি? মানুষ জঙ্গিবাদের সমর্থক? না তারা সরকারের ধরপাকড়ের ওপর আস্থাহীন? এগুলো না বুঝে সরকারি দলের নেতারা আবোল-তাবোল বকলে আমরা বুঝি কোথাও ঘণ্টা বাজছে।
এ ঘণ্টা ননস্টপ হলে কেউ ছাড় পাবে না এদেশে। হুম্মামরা কিন্তু এখন পলিটিক্যাল সেল্টারে। মন্ত্রী জেনেও না জানতে পারেন। আমরা জানি বলেই সতর্ক করি।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন