বন্যা পরবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে নৌ ডাকাত আতঙ্ক
রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা : তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদে বন্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে নৌ ডাকাতির প্রবণতা বাড়ে। জেলার চরাঞ্চলগুলোতে এবারও বন্যা পরবর্তী সময়ে নৌ ডাকাতি শুরু হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকার মানুষ। এজন্য সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ নদী পারে টাওয়ার নির্মাণ করে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে।
কেননা নৌ ডাকাতরা নৌকা নিয়ে এসে এসময়ে মানুষের বাড়িতে হানা দিয়ে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। গোটা চর এলাকা জলমগ্ন থাকায় প্রতিরোধ করার কোন উপায় না থাকায় বন্যাকালিন সময়টিতে ডাকাতের উৎপাত বেড়ে যায়। এ কারণেই পাহারা টাওয়ারে প্রতি রাতে পালাক্রমে পাহারা বসানো হয়েছে। ৩০ ফুট সিঁড়ির উপরে নির্মাণ করা হয়েছে পাহারা টাওয়ার। ঘরে উঠার জন্য আছে মই। এ বছর কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড কাজিয়ারচর ও ৩নং ওয়ার্ড লালচামার চরে ২টি পাহারা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চর এটি। স্থানীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সহায়তায় এসব পাহারা টাওয়ারে সোলার লাইট, হ্যান্ড লাইট, সাইরেন, দূরবীক্ষণ ও বাঁশি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিদিন এলাকার ৮ থেকে ১২ জনের একটি দল পালাক্রমে টাওয়ারে উঠে পাহারার দায়িত্ব পালন করেন স্বেচ্ছা শ্রমে। সাইরেন বেজে উঠলেই ডাকাতি প্রতিরোধে চরবাসি একজোট হয়ে এগিয়ে যাবেন ডাকাত প্রতিরোধে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ আগষ্ট রাতে কাজিয়ারচরে বানভাসি মানুষদের উপর হামলা চালিয়ে ওমর আলী, নুরুন্নবী, মমতাজ মিয়া ও রফিকুল ইসলামের ২৩ টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায় একদল সশস্ত্র ডাকাত। এসময় স্থানীয় লোকজন বাঁধা প্রদান করলে ডাকাতরা কয়েক রাউন্ডগুলি বর্ষণ করে নির্বিঘেœ চলে যায়। ডাকাতের গুলিতে আহত হয় মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র রেজাউল করিম ছানা ও সাইদুর রহমান। এঘটনায় ওমর আলীর দায়ের করা একটি ডাকাতি মামলা এখনও চলছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড লায়েক আলী খান মিন্টু জানান, প্রতি বছরই চরগুলোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাই নৌ-পুলিশ ফাড়ি স্থাপন করা দরকার। টাওয়ারে পাহারা দিয়ে বাড়ি-ঘর রক্ষা করা গেলেও নদী পথে চলাচলকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মালামাল দিনের বেলায় ডাকাতি হলেও প্রতিরোধ করার কোন সুযোগ নেই। কারণ ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে নৌ-যাত্রীদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায়। কেননা গত ৩১ জুলাই হরিপুর খেয়াঘাটের দক্ষিণে নৌ পথে দিন দুপুরে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে তারা উল্লেখ করে।
এব্যাপারে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন জানান, ডাকাতি প্রতিরোধে এবছর শুধু দুটি ওয়ার্ডে ২টি পাহারা টাওয়ার নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় মালামাল দেয়া হয়েছে। শুকনো মৌসুম এলে বাকি চরগুলোতেও পাহারা টাওয়ারের ব্যবস্থাসহ কয়েকটি ক্লাব ঘর নির্মাণ করে টিভি ও ডিস লাইন সংযোগ দিয়ে চরবাসির বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন চরবাসিকে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা করতে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা দরকার। কারণ থানা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এই চর।