সন্তান বিপথগামী হয় কেন?
অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা কৌতূহল বশত ‘কেমন লাগে’ এ ধরনের পরীক্ষা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে নেশায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। নিছক কৌতূহল কিংবা চরম আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছাতেই অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে কিংবা মানসিক অবসাদ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অনেকেই নেশা করে থাকে। নেশা সাময়িক দুঃখ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখে। সাধারণত যেসব ছেলেমেয়েদের মন দুর্বল তারাই নেশা করে থাকে। নিজেকে সংযত করার ক্ষমতা এদের কম। মানসিক দৃঢ়তা না থাকার কারণে এরা খুব সামান্য কারণেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে মনের ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে। দুঃখ, দুর্দশা এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ছেলেমেয়েরা নেশা করে থাকে। বিভিন্ন পার্টিতে আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য ছেলেমেয়েরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ছেলেমেয়েদের নেশা করার পেছনে তাদের মা-বাবারাও বহুলাংশে দায়ী হয়। অনেক মা-বাবা সন্তানের সামনে নেশা করে থাকেন। আবার যেসব সন্তানের মা-বাবা তাদের সন্তানেরা কার সঙ্গে মিশছে তার খোঁজ-খবর রাখে না। ফলে সন্তানেরা সঙ্গ দোষে নষ্ট হয়ে পড়ে। যেসব সন্তানদের মধ্যে সমস্যাজনিত আচরণ প্রকাশ পায় এবং যাদের ড্রাগ জাতীয় উপাদানের ওপর নেশা হওয়ার আশংকা থাকে, তাদের মধ্যে কতগুলো আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
যখন কোনো কিশোর-কিশোরী প্রথমাবস্থায় নেশা শুরু করে তখন তাদের বোঝা যায় না। ওই সময় তাদের ধরা বেশ মুশকিল। যেসব সন্তানেরা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে এদের মাঝে উদাসীনভাব লক্ষ্য করা যায়। তারা আলাদা থাকতে পছন্দ করে। বাড়ির বাইরে বেশি সময় থাকতে চায়। কোনো বন্ধুর ঘরে বা বাথরুমে বেশি সময় কাটাতে চায়।
এরা সবকিছুর ওপর থেকে উৎসাহ হারিযে ফেলে। উদ্যমী ছেলেদেরকেও নিরুৎসাহিত হতে দেখা যায়। সবসময় শুয়ে থাকতে চায়। বেশি মাত্রায় অলসতা কিংবা ঘুম এদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। লেখাপড়াসহ অন্য কোনো কাজে উৎসাহ দেখা যায় না।নেশাগ্রস্ত সন্তানদের টাকা পয়সার প্রতি বেশি ঝোঁক দেখা যায়। অনেকে টাকা পয়সার জন্য ঘরের জিনিস পর্যন্ত বিক্রি করে ফেলে। এরা অনর্গল মিথ্যা কথাও বলতে থাকে।
ওপরের কোনো রকম আচরণ সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পেলে তাকে নেশাগ্রস্ত না ভেবে প্রথমেই তার সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা উচিত। অনুসন্ধান সঠিক হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কিশোর-কিশোরীর মধ্যে নেশা করার প্রবণতা দেখা যায়, তাদের মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা যায়। কি ধরনের পরিবর্তন তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় সেটি নির্ভর করে সে কতদিন ধরে এ নেশায় আসক্ত। কিংবা কি পরিমাণে আসক্ত।
মাদকদ্রব্য ব্যবহার করলে পরিণতিতে কি হয়? মানসিক স্থিতিশীলতা বা ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষুধামান্দ্য বা অত্যধিক ভোজনে আগ্রহী হয়। মত্ত অবস্থায় অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। মারধোর কিংবা দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে বেশি দেখা যায়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, দুঃস্বপ্ন দেখা এবং অনিদ্রা উপসর্গ ইত্যাদি দেখা দেয়। অনেক সময় যৌনবিকৃতিও এদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়।
কিভাবে নেশা ছাড়াতে পারেন? অভিভাবকগণ যখন বুঝতে পারেন সন্তানেরা নেশা করছে। তখন তাদের ওপর প্রচ- রেগে গিয়ে মারধোর শুরু করে দেন। অনেকে হতাশায় ভেঙে পড়েন। অনেকে আবার তাবিজ গণৎকার ইত্যাদির স্মরণাপন্ন হন। এসব করে কোনো-ই লাভ নেই। প্রথমে মাথা ঠা-া রেখে জেনে নিনÑ সে কার কার সঙ্গে, কখন এবং কিসের নেশা করছে। তাকে মারামারি, গালিগালাজ না করে তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করুন। যাদের সঙ্গে মেলামেশা করে থাকে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। এ সময় অভিভাবকদের খুব বেশি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। সন্তানদের বুঝতে দিন নেশা ছাড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি সর্বাগ্রে প্রয়োজন। সন্তানের বিপদের সময় মা-বাবাই তাদের সবচাইতে বড় বন্ধু হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। পারিবারিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখুন। প্রতিদিন সন্তানদের জন্য সময় দিন এবং কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে কাটান। মা-বাবা এবং সন্তানদের সম্পর্ক যেন বন্ধুর মতো হয়। সুষ্ঠু ও সৌহার্দ্য পারিবারিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করুন।
ড্রাগের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে আলোচনা করুন। যারা ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়েছে কিংবা কাজ-কর্মে অসমর্থ হয়ে পড়েছে তাদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করুন। তাদের হতাশাময় জীবনে আলোর সঞ্চার করুন। বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে তাদেরকে নিয়োগ করুন। সময়ে সময়ে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করুন।
লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন