নতুন কমিটির পরও বিএনপিতে অস্থিরতা কেন?
ওয়াসিম ফারুক
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চার পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিশাল আকারের কমিটি দিয়েও স্বস্তিতে নেই দলটির নীতি-নির্ধারকেরা। কমিটি ঘোষণার প্রথম দিনেই দুজন নেতার কমিটি থেকে অব্যাহতি চাওয়া বা পদত্যাগ ঘোষণা দলের ভেতর এক চরম অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে মোসাদ্দেক আলী ফালুর পদত্যাগ। প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া দলের ভেতরে চলছে তোলপাড়। অনেকেই নাকি ফালুকে অনুসরণ করতে যাচ্ছেন। তাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দলের ভেতরে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে মানুষের ধারণা ছিল, বিএনপির রাজনীতিতে হয়তো অনেক চমক দেখা যাবে, পরিবর্তনও হবে। কিন্তু বিএনপি সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলো। এবারের কমিটিও পরিবারতন্ত্রের শিকল থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, শুধুমাত্র পারিবারিক প্রভাবের কারণেই হয়তো আফরোজা আব্বাস, খন্দকার মারুফ হোসেন বা অর্পণা রায় বাগিয়ে নিয়েছেন দলের বড় বড় পদ। নতুন কমিটিতে সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগও জোরাল। এমন অভিযোগ তুলেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান।
প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পেয়ে অনেক সিনিয়র নেতা হতাশার মধ্যে সময় পার করছেন। কমিটি পুনর্গঠন না করলে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দল থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।
বিএনপির এবারের নির্বাহী কমিটির একটি পদ হলো, সম্পাদক (বিশেষ দায়িত্বে)। কারণ, বিএনপির গঠনতন্ত্রে আদৌ এমন পদ আছে বলে আমার জানা নেই। তারপরও তারা গঠনতন্ত্রের বিরোধী এমন একটি পদ সৃষ্টি করে খুশি করতে চেয়েছেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও আবু নাসের মুহাম্মদ ইয়াহিয়াকে। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে এবার স্থান করে নিয়েছেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে শাস্তি পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, একই পরিবারের সদস্য গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কমিটিতে আছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজা পাওয়া আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীমও। প্রশ্ন তুলতে পারেন, হুম্মাম বা ফয়সাল আলীমের পিতারা অপরাধী হতে পারেন, কিন্তু তারা তো নন। তাহলে কেন পিতার অপরাধের দায় তাদের নিতে হবে? আমি যদি পাল্টা প্রশ্ন করি, হুম্মাম কাদেরকে কী পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচিত হতে দেখেছেন? মোটেও অনুশোচিত হতে দেখা যায়নি। বরং প্রতিশোধের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। বিএনপির অনেক নেতারই অভিযোগ, নতুন ঘোষিত কমিটিতেও নাকি জামায়াত পছন্দের অনেককেই বড় বড় পদ দেওয়া হয়েছে।
প্রথা অনুসারে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরদিন পদ পাওয়া নেতারা শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। কিন্তু এবার এতবড় কমিটি গঠনের পরও এখন পর্যন্ত নতুন নেতারা জিয়ার মাজারে যাননি। এতেই নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির অভ্যন্তরীণ অবস্থা বাহির থেকে কিছুটা হলেও বোঝা যায়।
বিএনপি বেশ কয়েকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, সংসদে প্রধান বিরোধিদলের দায়িত্বও পালন করেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটির ইতিবাচক রাজনীতি জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে, মানুষ তাদের কাছে সেই রাজনীতিটিই প্রত্যাশা করে। দলের ভেতর গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে, দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা বজায়ে অবদান রাখবেÑ এমনটিই জনপ্রত্যাশা।
লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন