দুই হাজার অভ্যন্তরীণ নথি ফাঁস গার্ডিয়ানে অস্ট্রেলিয়ান আটক কেন্দ্রের ভয়াবহতা উন্মোচন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ার আটক কেন্দ্রে থাকা নারী ও শিশুরা ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এবার তাদের আতঙ্কিত জীবনের ভয়াবহতাকে খোদ অস্ট্রেলিয়া সরকারের নথিবদ্ধ প্রমাণসমেত হাজির করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তৈরি ২ হাজারেরও বেশি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আটক থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরেছে প্রভাবশালী ওই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। দেখিয়েছে, কী করে ওই আটককেন্দ্রে যৌন নিপীড়নের ভয়াবহতা জারি থাকে। কী করে প্রতিদিন আতঙ্কিত শিশুরা জেগে ওঠে রক্ত আর মৃত্যুর দুঃস্বপ্ন নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হয়েছিল। যেসব কোম্পানি এ আটক কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দায়িত্বে থাকে, তাদেরকেই মূলত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় বিভিন্ন ঘটনা নথিবদ্ধ করার কাজে।
ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনগুলো ওইসব আটক কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষী, সহায়তাকর্মী এবং শিক্ষকরাই তৈরি করেছেন। আর প্রতিবেদনগুলো হাতে পাওয়ার পর সেইসব তথ্যগুলোই গার্ডিয়ানে প্রকাশ করা হয়েছে।
গার্ডিয়ান জানায়, নাউরু ফাইলস নামে ফাঁস হওয়া ২,১১৬টি প্রতিবেদনের অর্ধেকেরও বেশি (১,০৮৬টি ঘটনা) শিশুদেরকে নিয়ে। অবশ্য ওই প্রতিবেদনগুলো যখন তৈরি করা হয়, তখন নাউরুর ওই আটককেন্দ্রে থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে শিশুর উপস্থিতি ছিল ১৮ ভাগ।
নাউরু হলো বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র। এখানে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। ৮০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গার্ডিয়ান জানায়, আটককেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষীরা বিভিন্ন সময়ে শিশু ও নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়ে থাকে। নাউরু ফাইলসের সাতটি প্রতিবেদন শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের, ৫৯টি প্রতিবেদন শিশুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে এবং ৩০টি নিজের ক্ষতিসাধন সংক্রান্ত। এছাড়া ১৫৯টি প্রতিবেদনে শিশুসহ অন্য অভিবাসন প্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে নিজের ক্ষতিসাধনের হুমকি দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
নাউরুর ওই আটককেন্দ্রে কিছু বেপরোয়া কর্মকা- সংঘটিত হওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। নাউরু ফাইলসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের অক্টোবরে এক গর্ভবতী নারীকে বলা হয়েছিল তাকে নাউরুতেই সন্তান জন্ম দিতে হবে। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বালিকা প্রস্রাব করার সময় এক নিরাপত্তা রক্ষী তার দিকে টর্চের আলো ফেলেছিল। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থী বালিকাদেরকে স্কুলে যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আটকদেরকে সিগারেট ও গাঁজার বদলে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতে দেখা গেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনার উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এক নারী শিশু দুই মিনিটের বদলে চার মিনিট ধরে গোসল করার অনুমতি চাইলে এক পুরুষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে পাল্টাপাল্টি আরেকটি প্রস্তাব দেয়। অবশ্য ওই বালিকা তাতে রাজি হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বালক-বালিকাদের গোসল করা অবস্থায় দেখতে চাইতেন।