আবুল কাশেম : আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে গাজীপুরের বন বিভাগের জমি শিল্পপতিদের দেদারছে দখল দিচ্ছেন ঢাকা ডিভিশনের বন বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তারা। বন বিভাগের বরাদ্ধকৃত নার্সারির জমি ধ্বংস করে নিয়মের বাইরে গিয়ে নির্মাণ করে যাচ্ছে বহুতল ভবন। জানা গেছে, রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের মনিপুর বিটের অন্তর্গত ২নং খতিয়ানের সিএস ৫৯৮নং দাগ ও আরএস ১৭২৩নং দাগে ৪৩ শতাংশ বনের জায়গা দখল করেছে খলিল গ্রুপ। সেখানে তারা ৬তলা ভবন নির্মাণের কাজ করছে। বিট কর্মকর্তারা এটি দেখেও না দেখার ভান করছেন। বিট কর্মকর্তারা নিজেরা বাঁচতে লোকদেখানো একটি মামলা করেছে। কিন্তু জমি উদ্ধারে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।
বনের দালালরা খলিল গ্রুপের কাছ থেকে নানারকম সুবিধা নিয়ে মনিপুর বিটে রাতের অন্ধকারে গাছ উজাড় করে বনের জমি দখল নিয়েছে। তারা রাতের আধারে গাছ কেটে জায়গাটিতে এমন ব্যবস্থা করেছে যাতে মনে হয় এখানে কোনো গাছই ছিল না। অথচ সেখানে কিছুদিন আগেও বনের সমাজিক বনায়নের নার্সারি ও বাগান ছিল।
এ বিষয়ে বর্তমানে মনিপুর বিট কর্মকর্তা দেওয়ান আলী জানান, ‘আমি একা কী করব।’ কিন্তু আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, বনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সামাজিক বনায়নের সৃজিত বাগান বিনিষ্ট করে জমি দখলে সহায়তা করেছেন। আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভালো জানেন।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বিট কর্মকর্তারা বনের দখলকৃত জমি প্রথমে উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দালাল চক্রের সহায়তায় হোটেল হ্যাপি ডে ইন এ বসে টাকার বিনিময়ে দফারফা করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিট কর্মকর্তা দেওয়ান আলী মনিপুর বিটে আসার পর থেকে বনের জমিতে কয়েক ’শ বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন কারখানা থেকে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে জমি বরাদ্দ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে মনিপুর বিট কর্মকর্তা দেওয়ান আলী আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর থেকে বিটের অবস্থা খারাপ দেখতে পাই, আমার আগে যিনি ছিলেন (রিয়াজ উদ্দিন খান) তার সময়ে এই বাগান ও জায়গা দখল হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে খলিল গ্রুপের জি এম দ্বীন ইসলাম বলেন, বনের জায়গা দাবি করে বন বিভাগ মামলা দিয়েছে। আমরা তা আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপনারা বনের গাছ কেটে ভবন নির্মাণসহ রাস্তা এবং পুকুর খনন করার অনুমতি কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন- সেই জবাব আমি দিতে পারব না।
এই খলিল গ্রুপের নামে বর্তমানে বন বিভাগের ৩টি মামলা রয়েছে যার নং ১৮ তাং ১৯/০৫/১৫ইং মামলা নং ১২ তাং ২৫/০৬/০৯ইং মামলা নং০১ তাং ০৭/০৮/১৪ ইং।
বন বিভাগের দায়ের করা মামলার কথা জানিয়ে খলিল গ্রুপের জিএম দ্বীন ইসলাম বলেন, বিট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমে আমাদের চুক্তি হয় যে, ‘বনের জমি দখলের বিষয় নিয়ে যদি কোনো কথা থাকে বা সাংবাদিক ও উপরের মহলের কোনো চাপ আসে- সেক্ষেত্রে আমি সাধারণ মামলা দিয়ে দায় মুক্তি নেব।’ সম্পাদনা: আ. হাকিম