প্রয়োজনীয় ৮টি মাসআলা
আজান ও ইকামতের মাঝখানে দোয়া করা
রাসুল সা. বলেছেন, আজান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। অতএব তোমরা এসময় দোয়া কর। (তিরমিজি: ২১২; মিশকাত: ৬৭১)। তিনি বলেন, যখন সালাতের আজান দেওয়া হয়, তখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল করা হয়।’ (মু‘জামুল আওসাত: ৯১৯৫)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায় আজান আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হয়। সুতরাং এ সময় দোয়া করা যাবে এবং নিজের, পরিবারের ও বিশ্বাবাসীর মঙ্গলের জন্য এ সময় দোয়া করা উচিত।
ফরজ হজ পালন না করে মারা গেলে?
নিজের ও পরিবারের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের পর যদি অবশিষ্ট সম্পদ দ্বারা হজের খরচ নির্বাহ করা যায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর হজ ফরজ হবে। এরূপ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শারঈ কোনো ওজর ব্যতীত তা পালন না করে কেউ মারা গেলে অবশ্যই তাকে ফরজ ত্যাগের কারণে গুনাহগার হতে হবে। (আলে ইমরান ৩/৯৭; মুসলিম: ১৩৩৭)। আর কেউ যদি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালনকে ফরজ গণ্য না করে, তবে সে কাফির হিসাবে গণ্য হবে। (ইবনু তায়মিয়াহ, তাফসীর আল-কাবীর ৩/২২৭)।
নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারবে কি?
নারীদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ আছে। আয়েশা রা. তার ভাই আবদুর রহমান বিন আবুবকর রা.-এর কবর জিয়ারত করার সময় তাকে বলা হল রাসুলুল্লাহ সা. কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ নিষেধ করেছিলেন। তবে পরে তিনি পুনরায় অনুমতি দিয়েছেন। (মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৪৮৭১; সনদ ছহীহ, আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৮১)। এছাড়া রাসুলুল্লাহ সা. আয়েশা রা.-কে কবর জিয়ারতের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন (মুসলিম: ৯৭৪; মিশকাত: ১৭৬৭)। তবে সেখানে সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। (বুখারি: ১২৯৭)।
মৃত ব্যক্তির মন্দ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে কি?
মৃত ব্যক্তি মন্দ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। এমনটির অনুমতি নেই। মৃত ব্যক্তির মন্দ বিষয়ে আলোচনা করা জীবিত ব্যক্তির গীবত অপেক্ষা কঠিন গীবত হবে। কারণ জীবিত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির কাছে এ সুযোগ থাকে না। (মির‘আত: ১৬৯২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। তবে যদি মৃত ব্যক্তি কোন শিরক-বিদআত বা কবিরা গোনাহ করে থাকে এবং জনগণ তা অনুসরণ করতে থাকে, তাহলে তাদের উক্ত গোনাহ থেকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ও সংশোধনের স্বার্থে তা প্রকাশ করায় কোন বাধা নেই। এমন হলে তা আলোচনা করা যাবে। (শারহুল মুহাযযাব ৫/১৪৫; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৫/২৯৮) ।
একাকী নামাজ আদায়ে আজান দিতে হবে কি?
খোলা ও নির্জন স্থানে একাকী মুসল্লির জন্য আজান দেওয়া মুস্তাহাব। রাসুল সা. বলেন, কোন ব্যক্তি সমতল স্থানে থাকা অবস্থায় ওজু বা তায়াম্মুম করে যদি কেবল ইকামত দিয়ে নামাজ আদায় করে, তবে তার সাথে দু’জন ফেরেশতা নামাজ আদায় করে। আর যদি আজান ও ইকামত দেয়, তবে আল্লাহর একদল সৈন্য তার পেছনে নামাজ আদায় করে, যা সে দেখতে পায় না। (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, ছহীহ আত-তারগীব: ২৪৯)। সুতরাং একাকি নামাজ আদায়েও যদি সম্ভব হয় তাহলে আজান দেয়া উত্তম। তবে আজান না দিলেও নামাজের কোন প্রকার ক্ষতি হবে না। বিষয় নামাজী ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আজান দিলে সওয়াব হবে কিন্তু না দিলে গুনাহ হবে না।
হাই কমোডে ইস্তিঞ্জা করার হুকুম কী?
ওজরের কারণে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা জায়েজ। যেমন বসলে গায়ে ময়লা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বা পানির ছিটে গায়ে লাগার সম্ভাবনা থাকে, এরকম কারণে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যাবে। তবে শরিয়তে গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া এমনিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহে তাহরিমি। বাথরুমে হাই কমোড বানানো তাদের জন্য জায়েজ যাদের বসে প্রয়োজন সারা কষ্টকর। এমনিতে ফ্যাশন স্বারূপ এমনটি করা মাকরুহে তাহরিমি। প্রয়োজন ছাড়া হাই কমোড বানানো অনুচিত। তবে যেখানে কমোড ছাড়া ব্যবস্থা নেই সেখানে ইস্তিঞ্জা করা যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল-১/৫৭}
মুসাফাহার সময় হাতে ধরে ঝাঁকি দেওয়া
মুসাফাহার সময় হাতে অনেকেই ঝাঁকি দেন। কেউ শক্ত করে পেচে ধরেন। এমনটি উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে উভয়ের ডান হাত মিলাবে যা অত্যন্ত নেকির কাজ। (আবুদাঊদ: ৫২১২; মিশকাত: ৪৬৭৯, সনদ সহিহ)। জনৈক ব্যক্তি রাসুল সা.-এর কাছে মুসাফাহা করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কেবল দু’হাত মেলানোর ব্যাপারে সম্মতি দেন। এর বাইরে তিনি কিছু বলেননি। (তিরমিজি: ২৭২৮; মিশকাত: ৪৬৮০; সহিহাহ: ১৬০)। সুতরাং এই নিয়মের বাইরে মুসাফাহার সময় হাতে ঝাঁকি দেওয়া বাড়াবাড়ি বৈ কিছু নয়। যা পরিহার করা উচিত।
ফেরেশতাদের নামে সন্তানের নাম রাখা
অনেকেই বরকত লাভের জন্য ফেরেশতাদের নামে নিজের সন্তানের নাম রাখেন। এমনটা কোনো সমস্যার নয়। মাজমু শারহুল মুহাযযাব: ৪৩৬)। তবে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা যাবে না মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যার সূত্র খুবই দুর্বল। (আলবানি, যঈফুল জামে: ৩২৮৩)। এছাড়া নবিগণের নামেও নাম রাখায় কোন বাধা নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুল করিম সা. বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত: ৪৭৫০)।