অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে বিশ্বস্তদের হারাচ্ছেন খালেদা জিয়া
শাহানুজ্জামান টিটু : ভুল নীতি আর ভুল সিদ্ধান্ত- এই দুই কারণেই এখন নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন, অনেকে রাজনীতি থেকেই ইস্তফা দিচ্ছেন। এই অবস্থা চলমান থাকলে আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠবে, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে বিশ্বস্তদের হারিয়ে একা হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন দলটির নেতৃবৃন্দ। তাদের অভিযোগ দলের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রেই এমনটা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ঘোষিত বিশাল কমিটিতে খালেদা জিয়ার চারপাশে অবস্থানকারী শিমুল-রিজভী সিন্ডিকেটের একক আধিপত্য আর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ঘোষিত কমিটির ভাইস- চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী সদস্য ও মাগুরা জেলার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামালসহ চারজন পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে কাজী কামাল অভিযোগ করে বলেন, দলের নির্বাহী কমিটিতে কিছু বিতর্কিত লোকদের সদস্য করা হয়েছে যাদের নেতৃত্বে বিএনপি করা সম্ভব নয়। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ১/১১ সময়ে যার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবোধক সেই নিতাই রায় চৌধুরী (গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর বেয়াই) কে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার কারণেই পদত্যাগ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
নব্বই পরবর্তী অনেক ছাত্রনেতা এখনো কোনো পদ পাননি বলে তারাও হতাশ। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন রাজপথের নারী নেত্রীরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের অনেকেই বলেছেন, রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি, কারাগারে গিয়েছি। পরিবার-পরিজন বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্যাতন সহ্য করেছি। আর কমিটির পদপদবীর বেলায় অরাজনৈতিক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাদের জায়গা হয়। একইভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে শতাধিক বিভিন্ন পেশাজীবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
দলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী একটি মহল কৌশল অবলম্বন করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের ত্যাগী আর সিনিয়র নেতৃবৃন্দের একটি মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি করতে সক্ষম হন। সারাদেশের নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন করে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে সম্পৃক্ত সিন্ডিকেটের নেতাদের একটি বলয়ের সঙ্গেই নিয়মিত দেখা-সাক্ষাতের নিয়ম করা হয়- অলিখিতভাবে। জিয়া পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ কিংবা দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এই কৌশলের অংশ হিসেবে বের করে দেওয়া হয়। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে- শুধু সিনিয়র নেতৃবৃন্দই নন, আশির দশকসহ নব্বই দশকের ছাত্রনেতাদেরও দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। অপরদিকে ঘোষিত কমিটির বিশাল অংশজুড়েই সিনিয়র-জুনিয়র সমন্বয় না করে করা হয়েছে বলে অনেকের রাজনীতিই এখন হুমকির সম্মুখীন। অবমূল্যায়ন করা হয়েছে আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকাদের মতো নেতাদেরও। এসব নেতৃবৃন্দ এখন তাদের ইমেজ রক্ষার জন্য হলেও রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় থাকার চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কমিটির বিষয়ে তার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগা-া ছড়ানো হচ্ছে, সবই মিথ্যা। অন্যদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম