ব্যতিক্রমী প্রতিবাদে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়ারা
নাসিমুজ্জামান সুমন : ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারণে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়ারা বিস্তর ভোগান্তিতে পড়ছেন। এমনিতেই বাড়ির মালিকরা ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে চান না। কিন্তু যারাও দিতেন তার পুলিশি হয়রানির কারণে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। এই ভোগান্তির প্রতিবাদে ভাড়াটিয়া পরিষদ নামের একটি সংগঠন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বালিশ নিয়ে অবস্থানের মাধ্যমে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানায়। বিবিসি বাংলা।
অভিনব এই প্রতিবাদ সম্বন্ধে জানতে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার। এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের উদ্দেশ্য ও অর্জন সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘আমি যখন সারাদিন শেষে লেখাপড়া করে ঘুমাতে যাই ঠিক সেইমুহূর্তে আমাদের নিশ্চিন্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। বালিশ নিয়ে অবস্থানের মাধ্যমে প্রতীকী ভাবে দেখিয়েছি , বালিশটা যদি আমার একটি সম্বল হয় তাহলে আমি রাস্তার কোথাও না কোথাও থাকতে পারবো। এই বালিশ নিয়ে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে আমি রাষ্ট্রকে বলতে চাই, পুলিশের তল্লাশিতে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ই আতঙ্কে আছে। এ আতঙ্কের কারণে সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিক থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
অনেক দেশেই দেখা যায়, সরকার যখন কোনো বিশেষ অভিযান চালায় তখন সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে ভোগান্তিতে পড়ে। তাহলে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের এই সাময়িক ভোগান্তি মেনে নেওয়া উচিত নয়?
এধরনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য, জঙ্গিবাদের আস্তানা ভাড়াটিয়া বাসায় থাকে না। কিন্তু যদি গুটিকয়েক জঙ্গির কারণে ব্যাচেলদেরকে এভাবে হয়রানি করা হয়, তবে যদি কখনো ফ্যামিলির মধ্যে জঙ্গিবাদের সন্ধান পাওয়া যায়, তখন? এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবেন? সে কারণে আমি বলতে চাই, জঙ্গি আছে এবং জঙ্গি দমন করা হোক। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে গ্রেফতার করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই অভিযানে ভাড়াটিয়া যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বাড়িওয়ালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেগুলো জঙ্গি আস্তানা পাওয়া গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল মেস বাড়ি। অথবা ব্যাচেলররা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। এই পরিস্থিতিতে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া অথবা বাড়ির মালিকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের অবস্থান সম্বন্ধে কীভাবে আশ্বস্ত করবেন?
তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে সরকার পুলিশি তদন্তের কথা বলেছে। আমরা সরকারকে এটা আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু প্রকৃত জঙ্গিকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘুমন্ত অবস্থায় যদি পুলিশ তাদের অভিযান চালায় তাহলে সেই মুহূর্তে আমিতো মারাও যেতে পারি।’
কিন্তু পুলিশতো বাড়িওয়ালাদের আহ্বান জানাচ্ছে যে, ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়ায় কোনো অপত্তি নেই। শুধু তাদের তথ্য পুলিশের হাতে সরবরাহ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা নিষেধ করছে না, ঠিক আছে। কিন্তু বিষয়টি অন্য জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে। গত ৫ তারিখে রামপুরার একটি ছেলে কাপড়ের মধ্যে ময়লা পর্যন্ত দিয়েছে। এ অভিযান আতঙ্কে রূপ নিয়েছে।’