একান্ত সাক্ষাতকারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ফায়দা পেলেই কাদের সিদ্দিকী ও কামাল জাতীয় ঐক্যে আসবেন
কিরণ সেখ : খন্দকার মাহবুব হোসেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনজীবী নেতা বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। গত কমিটিতে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম একজন সদস্য। দলের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে। নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখন রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করায় বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জাতীয় ঐক্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন বিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ।
জঙ্গিবাদ রুখতে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের প্রক্রিয়া কতদূর। অনেকেই বলছেন, জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যখন দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে তখন এটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এটা কোনো দল ও সরকারের সমস্যা নয়। এই সমস্যা জাতীয় সমস্যা। তাই জাতীয়ভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর এটা বিএনপি ও দেশের জনগণ বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আসুন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা এই সমস্যার সমাধান করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ বলছে, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। জাতীয় ঐক্য কাদের নিয়ে হয়? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, বিএনপি বা ২০ দলীয় জোট দেশের জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি রাজনৈতিক দল। এই দলকে বাদ দিয়ে যদি বলা হয় জাতীয় ঐক্য হয়েছে, তাহলে এই কথা সঠিক নয়। বরং আওয়ামী লীগ সমস্যাটা জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার একটি অশুভ চেষ্টা করছে। তবে সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত। আমি আরও বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যদি নাও আসে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজস্ব উদ্যোগে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সন্ত্রাস দমনের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন।
সরকার বলছে, বিএনপিকে আগে জামায়াত ছাড়তে হবে। জামায়াত ছাড়া বা না ছাড়ার বিষয়ে কি বিএনপি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : জামায়াতকে ছেড়ে দিলেই যে আওয়ামী লীগ আসবে এই কথাটা সঠিক না। সরকার যদি জামায়াতকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখে থাকে তাহলে জামায়াতকে এতদিনে বন্ধ করে দিত। কিন্তু সরকার সেটা করছে না। বরং আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই, ১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। একইভাবে ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম করেছিল। তবে জামায়াতকে তারা বর্তমানে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। যদি তাই না হতো তাহলে এতদিনে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতো। কিন্তু তারা সেটা না করে জামায়াত জামায়াত করে বিএনপিকে বেকায়দার ফেলার চেষ্টা করছে। সুতরাং জামায়াতই জাতীয় ঐক্যের একমাত্র অন্তরায় নয়।
সরকারকে আমি বলতে চাই, যদি জাতীয় ঐক্য সত্যিকার অর্থে চান তাহলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়ে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আসুন। ওই প্লাটফর্মেই দেখা যাবে জামায়াতের গণসমর্থন আছে কি না?
জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপি চেয়ারপারসন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কি?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : ইতোমধ্যে যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মী বাহিনী নেই। তাদের লোকবল ও জনবল কতটুকু আছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। এদের মধ্যে রয়েছেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব ও ড. কামাল হোসেন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ, সততা, দেশ প্রেম ও সাহস রয়েছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যে আসার আগে তারা অনেক চিন্তা করবে, কারণ শুধু সন্ত্রাস দমন করতে তারা আসবে না। বিএনপির সাথে ঐকমত্য করতে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা কতটুকু হবে। তাদের এই রাজনৈতিক ফায়দার ক্ষেত্রে বিএনপি মতামত দিলেই তারা ঐকমত্যে আসবেন।
রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, জামায়াতকে ছাড়লে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : সারাদেশে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। সেখানে শুধু জামায়াত নয়, জোটের অন্য রাজনৈতিকদলগুলো বের হয়ে গেলেও বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বিন্দুমাত্র ক্ষুণœ হবে না। আর এককভাবে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার কায়েম করার জন্য জনবল এবং জনসমর্থন এই দুটিই বিএনপির আছে। একইসঙ্গে সাংগঠনিক শক্তিও আছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি