হাটের চাঁদাবাজি রোধের দায়িত্ব কার?
রবিউল আলম
কোরবানির অর্থ ত্যাগ, ত্যাগের মহিমা। প্রতিবছর আমাদের মাঝে ঈদুল আযহা আসে অনেক আত্মোৎসর্গের শিক্ষা নিয়ে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেক কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। গরিব, দুঃখী মানুষকে একটু মাংস দিয়ে কোরবানি দাতা সন্তুষ্টি লাভ করেন। পশুর চামড়া বিক্রি করে গবির আত্মীয়-স্বজন, এতিমখানা, লিল্লাহ বোডিংয়ে দান করেন। কোরবানি দাতার কষ্টার্জিত অর্থ, এতিমের হক পশুর হাটের ইজারাদার লুটে নিচ্ছেÑ দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিটি করপোরেশন পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা পশুর হাট বাজার ইজারা দেয়, ইজারার সিডিউলে অনেক শর্ত থাকে, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করলে বিনা নোটিশে ইজারা বাতিল হবে। পশুর হাট ইজারার শর্তগুলো এ রকমÑ ১. সরকার নির্ধারিত হারে টোল আদায় করতে হবে, ২. সিটি করপোরেশন, পৌরসভার রশিদ বই ছাড়া টোল আদায় করতে পারবেন না, ৩. হাটের পশু ব্যবসায়ীদের ও ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ৪. হাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ইত্যাদি। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও শর্ত ভঙ্গের দায়ে একজন ইজারাদারও চিহ্নিত হয়নি, শর্ত ভঙ্গের দায়ে ইজারাও বাতিল হয়নি।
প্রতিটি হাট পর্যবেক্ষণ কমিটি করার কথা থাকলেও আজও শুনিনি, দেখিনি পশুর হাট পর্যবেক্ষণ করতে। কোরবানি এলে কোরবানিদাতাকে লুটে নিচ্ছে পশুর হাটের ইজারাদাররা। সবক্ষেত্রে হয়তো নয়, কিছু ভালো ইজারাদারও আছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, জনসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত পশুর হাট ইজারাদাতারা হাট পর্যবেক্ষণ কমিটির বাৎসরিক রিপোর্টগুলো কোথায়? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় আছে কি? না থাকলে পর্যবেক্ষণ কমিটির কাজ কী? বৃটিশ সরকার গরুর হাট ইজারা দিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী কিনতো, তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। এখন গণতান্ত্রিক দেশ, জনগণের সরকার। ইজারাদাররা দলে ভিড়ে কোনো না কোনো মাধ্যমে, বিরোধী দলে থাকলে কোনো ইজারাদার, কন্ট্রাক্টারদের কেউ খুঁজে পাবেন না। সরকারি দল মনে করে দলীয় কর্মীরা যদি ইজারাদারি করে কিছু পায় ক্ষতি কী তাহলে? ইজারাদারদের নিজস্ব বাহিনী আছে, এলাকার বেকার যুবক ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে কোরবানির হাট টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। হাটের কাজ শেষ হলে এরা সবাই বেকার, একমাস হাটের চাঁদাবাজি করে, বাকি এগারো মাস চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপকর্ম করে বেড়ায়। পশুর হাটের এই অস্বাভাবিক উপার্জনের টাকা দিয়ে সমাজ নষ্ট ছাড়া ভালো কিছু হয় না। সরকারে কাছে অনুরোধ, দলীয় কর্মীদের যদি কাজে লাগাতে চান তবে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার গরুর হাটগুলোর ইজারা দেওয়া বন্ধ করুন। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাজস্ব আদায় করুন, হাজার হাজার দলীয় কর্মীদের কর্মসংস্থান হবে। যা একটি উদাহরণ হতে পারে। ঢাকায় প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লক্ষ গরু কোরবানি হয়। গরু প্রতি সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা খাজনা আদায় করলেও একশত পঞ্চাশ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। দুটি সিটি করপোরেশন গরু হাট ইজারা দিয়ে অতিরিক্ত তিরিশ কোটি টাকা পান, বাকি এই বিশাল অর্থ কতিপয় ইজারাদারদের পকেটে যায়।
যেহেতু ইজারাদাররা বিরোধী দলে থাকে না, সেহেতু দলের বিপদে ওদেরকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। যেমন বিএনপি এখন তাদের কোনো ইজারাদারকে খুঁজে পায় না। ওরা সবসময় সরকারি দলে থাকে। এরা সুবিধাবাদী চরিত্রের।সরকারকে ভাবতে হবে, পশু হাটের অর্থ দেশের কাজে লাগাবেন, দলীয় কর্মীদের কর্মসংস্থান করবেন নাকি কতিপয় ইজারাদারদের বিত্তশালী বানাবেন।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন