সাংসদ আমানুরের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চায় পুলিশ
ডেস্ক রিপোর্ট : টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যামামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)। চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ফারুক হত্যামামলার প্রধান আসামি সরকারদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা)। এই মামলায় তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা) ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমানসহ (কাকন) ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলো
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত এ মামলার আসামিদের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে গত সোমবার পুলিশ সুপার একটি চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ফারুক আহমেদ নিহত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারকে তার কার্যালয়ে ডেকে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনমনে সুশাসনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মামলাটি দ্রুততম সময়ে বিচার সমাপ্ত করার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর প্রয়োজন।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন শুক্রবার বিকালে বলেন, পুলিশ সুপারের দেওয়া চিঠিটি তিনি পেয়েছেন। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
সাংসদকে পলাতক দেখিয়েই বিচার শুরু হচ্ছে
সাংসদ আমানুর তার তিন ভাই ও অপর ছয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে ফারুক হত্যামামলার বিচারকাজ শুরু হচ্ছে। মামলাটি বিচারিক হাকিম আদালত থেকে বিচারকাজ নিষ্পত্তির জন্য গত সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুটি দৈনিক পত্রিকায় গত ৩০ জুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। ওই ৩০ দিনের মধ্যে সাংসদ আমানুর রহমান খানসহ পলাতক ১০ আসামির কেউ আদালতে হাজির হননি। গত সোমবার মামলার ধার্য তারিখে টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতের বিচারক হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুম মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে পাঠিয়ে দেন। মুখ্য বিচারিক হাকিম ওই দিনই মামলাটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান। জেলা ও দায়রা জজ বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাটি পাঠিয়েছেন। ২৪ আগস্ট মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে। ২০১৪ সালের আগস্টে এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য দেন।
এরপর থেকে সাংসদ ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২০ মে সাংসদ ও তার ভাইদের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।