রিমন মাহফুজ : ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবেলায় সাংস্কৃতিক তৎপরতা বাড়ানোর তাগাদা দিয়ে লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এর মাধ্যমেই সত্যিকারের সমাধান মিলতে পারে।
‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শিরোনামে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, পরলৌকিক চিন্তায় বিভোর তরুণ প্রজন্মের সেই অংশের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
‘কম বয়সী ছেলেগুলো যখন নিজেকে নিয়ে, দেশ ও সমাজকে নিয়ে চিন্তা করবে, তখন তারা ভাবছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করে তারা পরকালে বড় জায়গায় যাবে। আমার মাথায় এসব চিন্তাধারা ঢোকে না।’
গত মাসে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের অধিকাংশই ঢাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানে নিহতদের মধ্যেও ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাওয়া গেছে।
এ প্রেক্ষাপটে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জাফর ইকবাল বলেন, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের আমাদের বোঝাতে হবে- এ দেশের লাখো মানুষ জীবন দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল- প্রতিটি ধর্মের মানুষ পাশাপাশি অবস্থান করবে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় থাকবে প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে। তারা একদিন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবে, হাতে হাত রেখে এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এই সভায় অংশ নিয়ে এ আয়োজনের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানান অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
আমরা সারা জীবন ধরে যেটা করার জন্য দাবি জানিয়েছিলাম, সরকার আজ তার উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের মধ্যে যে অনুভব ছিল, তা আজ দেশ ও রাষ্ট্র অনুভব করছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ’খানেক বাউল শিল্পী ছিলেন এই সভায়। তাদের জীবনধারা, ভাববাদের কথা উল্লেখ করে বাউলদের ওপর হামলা-নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান জাফর ইকবাল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমও বাউলদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়নের নিন্দা জানান।
বিভিন্ন সময় বাউলদের ওপর হামলা হলেও তার জোরালো প্রতিবাদ না হওয়ায় জঙ্গিরা আরও মারমুখী হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমরা নাটক-গান-কবিতার বড় আসর করে মানুষকে বলব আমাদের কথা। আপনারা আয়োজন করুন, আমি আছি আপনাদের সাথে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পাশাপাশি কবিতা পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, সংসদ সদস্য ও কবি কাজী রোজী, কবি মুহাম্মদ সামাদ, শাহজাদী আঞ্জুমান আরাসহ আরও অনেক কবি।
অনুষ্ঠানে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউলরা। সম্পাদনা: এম আলম