রাজধানীতে পার্ক দখলের মহোৎসব
ফয়সাল খান : রাজধানীর বেশিরভাগ পার্কেই চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। পার্কগুলো দখল করে ভিতরে বাইরে নির্মাণ করা হয়েছে ছোট বড় বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা। প্রভাবশালী ও হকারদের দখলের পাশাপাশি ছিচকে সন্ত্রাসী আর মাদকসেবীদের সবচেয়ে নিরাপদ আস্থানায় পরিণত হয়েছে এসব পার্ক। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এসব পার্কে আসা দর্শনার্থীদের নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্কটিতে দীর্ঘদিন ধরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী রাখা আছে। সায়দাবাদ পার্কেও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য বিল্ডিং নির্মাণ করেছে ওরিয়ন গ্রুপ। রাসুলবাগ পার্কের ভিতরে আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টারের জন্য ৩তলা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। মলিটোলা পার্কের পশ্চিম পাশে একটি অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড আছে। জিন্দাবাহারে অবস্থিত সিরাজদৌলা পার্কের সামনের ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশকিছু ফলের দোকান। নারিন্দা শিশু পার্কে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত দোতলা ও নারিন্দা লায়ন্স ক্লাবের একতলা ২টি বিল্ডিং রয়েছে। বকশীবাজার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে ২৭ শতাংশ আয়তনের পার্কটি স্থানীয় ভ্যানচালকদের দখলে। শিশুপার্কের সামনের অংশটি হকাররা দখল করে রেখেছে বলে জানায় দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন ২৩ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত ওসমানী উদ্যান। ইতোমধ্যে এটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাউন্ডারি দিয়ে পার্কটি ঘেরা থাকলেও খোদ নগর ভবনের সামনেই গ্রিল ভেঙে অবৈধভাবে পার্কের ভেতরে-বাইরে অসংখ্য দোকানপাট বসানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর পার্ক দিয়ে নিরাপদে চলাচল করাও দুষ্কর। তবে ডিএসসিসি সূত্র জানায়, অল্প সময়ের মধ্যে নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে গড়ে উঠবে উদ্যানটি।
রাজধানীর শাহবাগ এলাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটি হিজরা আর ছিনতাইকারীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। পাশেই অবস্থিত ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সন্ধ্যা ৬টার পর পার্কে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে হলগুলোতে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, স্থানীয়দের কাছে লেডি বাগান হিসেবে পরিচিত মতিঝিল পার্ক। প্রায় ৩৫ শতাংশ জমিতে বিআরটিসি ভবনের বিপরীতে অবস্থিত পার্কটির সীমানায় থাকা গ্রিল ভেঙে একাধিক প্রবেশপথ তৈরি করেছে দখলদাররা। মাঠজুড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পার্কের ভেতরে ২টি হোটেলসহ ১০ থেকে ১২ টি দোকান বসানো হয়েছে।
বংশালের পুরাতন চৌরাস্তা এলাকায় মাত্র ২ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বংশাল ত্রিকোণাকৃতি পার্ক। এ পার্কের চারদিকেও অবৈধভাবে বসানো হয়েছে চা, পান, ফল ও সিগারেটের দোকান। পার্কটির সামনেই একটি ডাস্টবিন। দুর্গন্ধের কারণে এ পার্কটিতে স্থানীয় কেউ এসে বসতে চান না বলে জানায় ভুক্তভোগীরা।
বাংলামটর সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্ক। সেখানে শিশু-কিশোরদের বিনোদনের কোনো উপকরণই নেই। পার্কের ভেতরের জমিতেই ডিএসসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করতে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে এটি বাস্তবায়নে পিছু হটে ডিএসসিসি। এ পার্কে রয়েছে কয়েকটি দোলনা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি না থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দোলনাগুলো। পার্কটির সীমানা প্রাচীরও অনেক স্থানে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ডিএসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল জানান, পার্কগুলো সংস্কারে ইতোমধ্যে ডিএসসিসি একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এসব পার্ক নতুন করে সাজানো হবে। সন্ধ্যার পর হাটাচলার জন্য বিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় নাগরিকদের তত্ত্ব¡াবধানে এসব পার্ক পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি। প্রকল্পটি অতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। অল্প সময়ের পরার্মশক নিয়োগের মাধ্যমে নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিএসসিসির এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি