কয়লার বিষ নিয়ে কথা শুনছি!
ফিরোজ আহমেদ
সুন্দরবনের ওপর আঘাত যত রকম মানুষকে চেতনার কত গভীরে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা বেশ বুঝতে পারি প্রতিদিন জন্ম নেওয়া গান-কবিতা-ছড়া-নাটক-ব্যঙ্গ সাহিত্য থেকে। প্রকৃতি-প্রতিবেশ-বাস্তুসংস্থান নিয়ে আলাপ কিছুদিন আগেও ছিল শৌখিন কিছু মানুষের চর্চা। রাস্তায় চলতে ফিরতে আজ কয়লার বিষ নিয়ে কথা শুনছি। মানুষের চেতনা দানা বাঁধছে, ঘনবদ্ধ হচ্ছে। সুন্দরবনকে হারিয়ে দেবে, এমন সাধ্য কারও নেই। সুন্দরবন বেঁচে থাকবে তার সন্তানদের ভালোবাসায়। সঙ্গে যে যৌথ চেতনার জন্ম হচ্ছে, সেই হয়তো আবারও জাগাবে কারখানার দূষণে বন্ধ্যা হওয়া জমিকে; বিষাক্রান্ত মাছ আর ফসলকে সুস্থ করে তুলবে আবারও। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম তাজা বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে।
বন্ধুরা, এই যে এত এত ছাই চাপা প্রতিভার অঙ্কুরোদগমন আমরা দেখলাম, সেগুলোর একটা সংকলন কি হওয়া উচিত না? গানগুলোর, কবিতাগুলোর, ছড়াগুলোর, নাটকগুলোর, বিদ্রুপগুলোর?
কারও কারও আপত্তিও থাকতে পারে, কিন্তু বাছাই করা মোসাহেব বচনগুলোরও কেন না? সাহস একটা অনুশীলন। সৃজনশীলতাও তাই। একটা জাতি সাহসী উঠতে থাকে পূর্বসূরীদের দৃষ্টান্তগুলো থেকে। একটা জাতির প্রতিভাগুলোও বেড়ে ওঠে গুরুজনদের আস্কারায়। এমনকি মীর জাফরদের কোনো পথ সদা বর্জনীয়, সেই দৃষ্টান্তও তো হাজির থাকা উচিত। ভবিষ্যতের শিশুরা জানুক, আমাদের কথাসাহিত্যকরা কিভাবে সুন্দরবনকে রাতের পর রাত ধ্যান করেছেন, কবিরা শব্দ ছিড়ে এনেছেন আকাশ থেকে, শিল্পীরা কত মগ্ন হয়ে বনের ছবি এঁকেছেন (জ্যাক প্রেভের বলে গেছেন পাখির ছবি আঁকা খুব সহজ নয়), ছড়ার ছন্দে কিভাবে পাঠকের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এসেছেন। পথনাট্যের শ্লেষে সমস্বরে কিভাবে দর্শকরা ক্ষমতার তখতকে উপহাস করেছেন।
একটা সংকলন জরুরি, এমনকি সম্ভব হলে কয়েকটা। সুন্দরবনকে কেন রক্ষা করা দরকার, তার বৈজ্ঞানিক যুক্তি, অর্থনীতির যুক্তি তো অনেক হলো। প্রায় মর্মস্থ সবার, পাঠ্যবইয়ের মতোই। দাবি করছি একটা সংকলনের, যেখানে থাকবে সুন্দরবনের জন্য প্রকাশ পাওয়া প্রাণের ভাষাগুলোর, ছবিগুলোর।
লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন