গ্যাসের দামবৃদ্ধির যুক্তি কী?
কল্লোল মোস্তফা
গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য তিতাস গ্যাসের অন্যতম যুক্তি হলোÑ বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে যে গ্যাস তারা এখন ৪.৯৮ টাকা দরে কেনে, তা নাকি তাদেরকে ১০.৯১ টাকা দরে কিনতে হবে। এছাড়া বাপেক্সকে ০.২২৫ টাকার বদলে ০.৩০ টাকা এবং বিজিএফসিএলকে ০.৪৫ টাকা দিতে হবে। এ জন্য গ্যাস ক্রয় বাবদ ২০১৪-১৫ সালে যেখানে ৭ হাজার ১৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে নাকি খরচ হবে ১৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ।
প্রথমে আসি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনার বাড়তি দর প্রসঙ্গে। কোন যুক্তিতে বিদেশি কোম্পানিকে আমরা দ্বিগুনের চেয়ে বেশি দাম দিতে যাব? বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনা হয় নির্দিষ্ট পিএসসি (প্রোডাকশান শেয়ারিং কনট্রাক্ট) অনুসারে। বর্তমানে যেসব বিদেশি কোম্পানির গ্যাস বাংলাদেশ কিনছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে অনেক আগে, সেই চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানির পক্ষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই (নাকি তাদেরকে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো ধান্দা চলছে?)।
দেশি কোম্পানির কাছ থেকেও বাড়তি দরে গ্যাস কিনে সেটা আবার পাবলিকের কাছ থেকে আদায় করার কোনো যুক্তি নেই। দেশি কোম্পানির গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড রয়েছে। তাছাড়া জনগণের অর্থে যে বাজেট হয় সেখানে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার বদলে বাড়তি দাম আদায় করে পাবলিকের পকেট এবং দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজানো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আসলে নতুন পিএসসি চুক্তির মাধ্যমে সাগর থেকে যে গ্যাস উত্তোলন করা হবে, তা বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ভবিষ্যতে অনেক বেশি দামে কিনতে হবে। এছাড়া এলএনজি গ্যাসের জন্যও উচ্চমূল্য প্রদান করতে হবে। এসবই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে সাগরের গ্যাস উত্তোলনের যোগ্য করে না তোলার ফল। ভবিষ্যতে এর খেসারত হিসেবে যে বিপুল বর্ধিত মূল্যে নিজেদের গ্যাস বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে তাতে পাবলিককে আগাম অভ্যস্ত করতেই এই মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা।
ভবিষ্যতে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবেÑ এই যুক্তিতে এখন থেকেই দাম বাড়িয়ে নেওয়া হিরক রাজ্যেই মানায়।
লেখক : প্রকৌশলী