তর্ক বিতর্কে জঙ্গি ইস্যু!
ওয়াসিম ফারুক
বর্তমান সময়ে দেশে অন্যতম সমস্যা ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিবাদ। সমস্যা আলোচিত হলেও নতুন নয়। পুরনো পণ্যেরই একটা নতুন মোড়ক। একেক সময় এই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা একেক বেশে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের কোনো প্রগতিশীল মানুষই রক্ষা পাইনি ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিদের ছোবল থেকে, যাকে যেভাবে পেরেছে আঘাত করেছে। তাদের এই আঘাত থেকে বাঁচতে অনেক প্রগতি চিন্তার মানুষকে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে শুধু জীবন রক্ষার জন্য দেশান্তরি হতে হয়েছে। আর যারা দেশান্তরি হতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের অনেককেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে। ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিরা আস্কারা পেয়েই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার সাহস যুগিয়েছে।
গুলশান হামলায় জঙ্গিদের কোনো নির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া বা শর্ত ছিল না। যদিও কিছু গুজব বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে কিন্তু আমরা এর কোনো সত্যতা পাইনি। তাই এই হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গিরা শুধুই ছিল হামলাকারী। তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কিছু নিরীহ মানুষকে বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকদের খুন করে দেশে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করে পালিয়ে যাওয়া। তারা সাধারণ মানুষদের বর্বরভাবে খুন করতে পেরেছিল ঠিকই, তবে পালানোর পথ বের করতে পারেনি। তবে নাটের গুরুরা এখনও রয়ে গেছে ধরাছোয়ার বাইরে।
হাসনাত ও তাহমিদকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় বিতর্কের বন্যা বইছে। ইতোমধ্যে কানাডা থেকে ‘ফ্রি তাহমিদ’ নামে একটি মিডিয়া ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। এই ক্যাম্পেইন মাধ্যমে তারা তাহমিদকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য নানা চেষ্টার মাধ্যমে দেশের ভিতর লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদেরকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে বলেই আমার ধারণা। হাসনাত বা তাহমিদ কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কিনা বা তারা গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত কিনা সেটা নিয়ে আমি বিতর্কে যাব না, যেহেতু তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কবজায় আছেন, তদন্ত ঠিকভাবে চললে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী সেটা বের করতে সক্ষম হবেন।
গুলশান হামলার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় হাসনাত ও তাহমিদের যে সব ছবি ও ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়েছে তাতে আমাকে দারুণভাবে বিস্মিত করেছে, মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্নের। গুলশান হামলার জঙ্গিরা নাকি বলেছিল, মুসলমান আর বাংলাদেশি হলে ওরা মারবে না? অথচ ওদের হত্যা থেকে কিন্তু ফারাজ, ইসরাত আর আম্বিতাও রক্ষা পায়নি। এমনও গুজব শোনা গেছে, ফারাজরা নাকি বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, হাসনাত ও তাহমিদেরও তো বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়া তবে এমন কি কর্মের জন্য জঙ্গিরা তাদের রেহাই দিল?
মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ কোনো সাধারণ সমস্যা নয় এমনকি কোনো রাজনৈতিক সমস্যাও নয় যে এটা নিয়ে বিতর্ক তুললে এর গতিধারা বা পথ পরিবর্তন করা যাবে। সরকার ও তার প্রশাসনেরও লক্ষ্য রাখতে হবে, জঙ্গিবাদের মতো জীবন-মরণ ইস্যুতে তাদের কর্মকা-ে কোনো নাটকীয়তার জন্ম যেন না দেয়। জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত যেকোনো ঘটনাই তারা দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করবে যাতে দেশের সাধারণ মানুষের মনের ভিতর জঙ্গিবাদ ইস্যু নিয়ে বিন্দুমাত্র বিতর্কিত প্রশ্নের জন্ম না নেয়। তাহলেই সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে উগ্রধর্মীয় জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন