একসঙ্গে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর পায়রাবন্দরের যাত্রা শুরু
দীপক চৌধুরী : পায়রা সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্দরের বহির্নোঙরে চীনের জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পদ্মা সেতুর জন্য আনা ৫৩ হাজার মেট্রিক টন পাথর খালাসকাজের মাধ্যমে সূচনা হয় দক্ষিণাঞ্চলের বহুল প্রত্যাশিত এ বন্দরের। একইসঙ্গে আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শনিবার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সমুদ্রবন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এ সময় তিনি নামফলক উন্মোচন করেন।
পায়রাবন্দরের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপনের কথা উল্লেখ করে বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ নিয়ে পরিকল্পনার কথাও জানান শেখ হাসিনা। এর আগে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ছয়টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে এরপর উদ্বোধন করেন আটলেনে উন্নীত যাত্রাবাড়ী-কাচপুর মহাসড়ক, যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংকসহ) মাওয়া এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা মহাসড়ক উভয়দিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের (পদ্মা সেতু লিংক রোড) নির্মাণকাজ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রায় মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পায়রা হচ্ছে শান্তির প্রতীক। সে কারণে এ নামটি আমি পছন্দ করেছি। ভবিষ্যতে পায়রাবন্দর গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে রূপ নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চল সব সময় অবহেলিত ছিল। এদিকে কেউ কখনো তাকায়নি। আমরা চেষ্টা করছি, দেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে। আর সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ অঞ্চলে পায়রাবন্দর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, এ বন্দরটি পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোর ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলাকার মানুষ যাতে জমি অধিগ্রহণের জন্য ন্যায্যমূল্য পায়, আমরা তা নিশ্চিত করব। এ এলাকার মানুষজন এমনিতেই প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। আমরা মনে করি, পায়রাবন্দর গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর থাকবে না। আমরা পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সৃষ্টি করব। আমরা নদীগুলোকে ড্রেজিং করে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত নিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পণ্য খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর এমভি পেয়ারা-৬, এমভি ফেকু মিয়া, এমভি সৈনিক-৫, এমভি নিউটেক-২, এমভি নিউটেক-৬, এমভি মেরিন-৫, এমভি মেরিন-৮, এমভি টাইগার অব ইস্ট বেঙ্গল-৭, কেএসএল প্রাইড এবং কেএসএল গ্লাডিয়েটর নামের ৬টি লাইটার ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী পাথরবোঝাই চারটি বড় জাহাজ বহির্নোঙরে অবস্থান করা এমভি ফরচুন বার্ড জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
গত ৩১ জুলাই ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে পায়রাবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙরে আসে প্রথম জাহাজ এফবি ফরচুন বার্ড। ১ আগস্ট অনানুষ্ঠানিকভাবে এসব পাথর খালাস করার কথাছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এত দিনে তা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি পায়রাবন্দরের বহির্নোঙরে ১১ দিন ধরে অপেক্ষা করেছে।
পায়রা সমুদ্রবন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে কলাপাড়া উপজেলা সদরের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়ককে তোরণ ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী রাবনাবাদ নৌ-চ্যানেলের পশ্চিম তীরে অবস্থিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন পাস হয়। এ আইনের আওতায় রাবনাবাদ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার মধ্যবর্তী টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া এলাকায় পায়রা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে।
উদ্বোধনের সময় কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের পায়রাবন্দর প্রান্তে বিশেষ অতিথি হিসেবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মো. মাহবুবুর রহমান, মাদারীপুর-১ আসনের সাংসদ নুরে আলম চৌধুরী, পটুয়াখালী সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ বেগম লুৎফুন্নেসা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা: এম আলম