শোক দিবসের শপথ হোক জঙ্গিবাদ নির্মূল
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যসহ যারা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। এই দিন উপলক্ষে যেসব আনুষ্ঠানিক সংস্কৃতি দেশে প্রচলিত আছে, সেগুলো আমরা পালন করি। তবে এবারের শোক দিবসের তাৎপর্য একটু আলাদা। কারণ এই বছর আমরা ভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে শোক দিবস পালন করতে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালে স্বাাধীনতাবিরোধিরা ছাড়া সমগ্র জাতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। জাতির জনকের নেতৃত্বে স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করা হয়। আমি বলি, ওই দিন কেবল জাতির জনককে হত্যা করা হয়নি। একই সঙ্গে তিনটি হত্যাকা- সংঘঠিত হয়। তা হলো বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ। সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাকিস্তানের যত পৃষ্ঠপোষক ছিল, তারা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মহান অর্জনগুলোকে ধুয়ে-মুছে ফেলে নতুন পাকিস্তান কায়েমের চেষ্টা করে এবং সেই লক্ষ্যে তারা আজও কাজ করছে। সেখান থেকে আমাদের পশ্চাৎ পদযাত্রা শুরু। আমরা আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। যদি একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়, এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে যে সম্পর্ক তা অনেক আগ থেকে। কেবল মুক্তিযুদ্ধ নয়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করেছিল এদেশের প্রচুর লোক। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, ‘ফেব্রুয়ারি ৮ই হবে, ১৯৪৮ সাল। করাচিতে পাকিস্তানে সংবিধান সভার (কন্সটিটিউয়েট এ্যাসেম্বলি) বৈঠক হচ্ছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কি হবে সেই বিষয়ও আলোচনা চলছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। পূর্বপাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যেরও সেই মত।…’ আমাদের বিভিন্ন আন্দোলন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সবসময়ই কিন্তু বাংলা ভাষাভাষি কিছু লোক এই সব আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। আমি মনে করি, বাঙালির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনগুলোর বিরুদ্ধে সেই সময়ের বিরোধিরা এখনও সক্রিয়। এদের সংখ্যা কখনও কমেনি বরং আগের চেয়ে বেড়েছে।
এখন যারা জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে লিপ্ত, আর্থিক পৃষ্ঠপোষক এবং ভুল মতাদর্শ দিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করছে, তাদের প্রত্যেকের পেছনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এরা সেই গোষ্ঠী, যারা ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ’৭৫ সালে যারা জাতির জনককে হত্যা করেছিল এবং ২০০৪ সালে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের লোকজনের ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এরা সবাই একই গোষ্ঠী। এদেরকে এখন হরকাতুল জিহাদ, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবিসহ বিভিন্ন নামে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ঘুরে-ফিরেই ওই ব্যক্তিগুলো একই ঘরনার। অর্থাৎ তারা একই মতাদর্শ এবং বিশ্বাসের লোক।
তাদের মাঝে যে ধর্মীয় উগ্র মতবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বিশেষ করে ভারতবিরোধিতাসহ বাঙালি সংস্কৃতির আচার-অনুষ্ঠানাদির বিরোধিতা করেছে, তার সমস্ত উপাদান কিন্তু আজকের এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়াজড়ি করে আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই সমস্যা ওই ধারাবাহিকতা থেকে এসেছে। আমরা যখন জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে আলোচনা করব, তখন মনে রাখতে হবে, যারা শত্রুপক্ষ ছিল তারা এখনও সক্রিয়, তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং তারা সমাজে নানা বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। অনেক দল, উপদল দেখা গেলেও তাদের লক্ষ্য কিন্তু একটিইÑ তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, জঙ্গিবাদ অথবা পাকিস্তানি মৌলবাদী ভাবধারার বিরোধিতা করে, অগ্রসরমান চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে, তাদেরকে নাশ করে দেওয়া। যদিও এই সরকারের সমালোচনা এবং সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও জাতির জনকের হাত ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো দল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দলের কেউ যদি বিচ্যুতিও করেন, তারপর আমরা বলব, একমাত্র আওয়ামী লীগ সেই দল যারা দলীয় ভাবাদর্শগতভাবে উদার গণতান্ত্রিক, সহনশীল, ধর্মনিরপেক্ষ এবং বৈষম্যহীন সমাজের চেতনাকে বহুলাংশে ধারণ করে। হয়তো এই ভাবনা চর্চার মধ্যে সমস্যা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম যে অর্জন বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র যথাযথ চর্চার ক্ষেত্রে হয়তো সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু আদর্শগতভাবে এই দল এখনও বিষয়গুলোকে ধারণ করে। জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটি দীর্ঘমেয়াদী টার্গেট আছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদেরকে যারা অস্ত্র, অর্থ সংস্থান করে তাদের একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম আছে। সেখানে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বের আর কোথায় না হোক অন্তÍত মধ্যপ্রাচ্যের কিছু এলাকায় তারা ইসলামি খেলাফত কায়েম করবে। যেটাকে আমরা বলি রাজনৈতিক ইসলাম, তারা তা কায়েম করবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা বিশেষ কিছু অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রায় দুই, আড়াই দশক ধরে আমাদের এখানে দেশজ যে জঙ্গিগোষ্ঠী সক্রিয় আছে বিশেষ করে যারা আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, বসনিয়া ও কাশ্মির যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিল, তারাই কিন্তু জঙ্গিবাদের প্লাটফর্ম এবং অ্যালায়েন্সে তৈরি করছে।
বর্তমানে জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত, বেহাল করা এবং পারলে উৎখাত করে দেওয়া। জঙ্গিরা মনে করে, এই সরকারের পরিবর্তন ঘটলে, অন্য যেকোনো সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের আশ্রয়ে জঙ্গিবাদী কর্মকা- প্রচার এবং প্রসার করা যাবে। অন্য সরকার জঙ্গিবাদকে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দেবে। যেমনটি পেয়েছিল ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত। কাজেই জঙ্গিদের তাৎক্ষণিক লক্ষ্যই হলো শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো। এমন অবস্থা থেকে আমরা অনেকেই শিক্ষাগ্রহণ করতে পারি। আজকের জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকে নানা কর্মসূচির কথা বলেন। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। যাতে তরুণরা বাঙালি সংস্কৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে। এলক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এবং সামাজিক একটি আন্দোলন দরকার। কিন্তু এর জন্য সমাজে নতুন কোনো মতাদর্শের আমদানির প্রয়োজন নেই। আমরা যখন এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব তখন মূল অস্ত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান এবং ভারত নামক পৃথক দুইটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হলো। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরপরই কিন্তু বঙ্গবন্ধুসহ এই অঞ্চলের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীর অনুধাবন করেছিলেন, পাকিস্তান বলতে যা বোঝায় তা দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীকার অর্জন করা সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত প্রসারিত। ৫৬ সালের পর ৭১-এ এসে মুক্তিযুদ্ধ হয়। পাকিস্তান আমলের ১৯৪৮ থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত পড়লেই বোঝা যাবে। বঙ্গবন্ধু আসলে বুঝতে পেরেছিলেন, একমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশ এই ভূ-খ-ের মানুষের প্রকৃত মুক্তি দিতে পারে। তার আত্মজীবনী পড়লে তার দিকনিদের্শনা পাওয়া যাবেÑ দ্বিজাতি তত্ত্বের মতো ধারণা থেকে বের হয়ে এসে একটি উদার গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সহিষ্ণু সমাজের ধারণা। যে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে পক্ষপাতিত্ব করবে না, সেই রকমই একটি রাষ্ট্র জাতির জনক তৈরি করতে চেয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখন আমরা তা থেকে দূরে সরে গেছি। সমাজের নানা স্তরে আমরা যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে চাপা দিয়ে এবং পাকিস্তানি মতাদর্শভিত্তিক যে সংস্কৃতি, শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা যখন শুরু হয়Ñ যার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে জঙ্গিবাদ। আমি মনে করি, এই জঙ্গিবাদকে রুখতে হলে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যেতে হবে। জাতির জনকের রাষ্ট্রপরিচালনের আদর্শে ফিরতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রযাত্রা নির্দেশ করে আমরা ধনী রাষ্ট্র হবো। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হবো। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র হবে এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এত বাধা-বিপত্তি থাকার পরও জিডিপির প্রবৃদ্ধি এগিয়ে চলছে। এবছরই লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে। সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল খাতে সূচকগুলো ঈর্ষান্বিত। বিশ্বের অনেক দেশই আমাদের অর্থনীতির সূচক আশ্চর্যজনক বলে মনে করে। আমরা একটি পর্যায়ে গিয়ে ধনী দেশ হবো। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গিত্ব বা জঙ্গি মনোভাবের লোকজন যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিম-ল তৈরি করা না যায়, তাহলে দেশের সমস্ত অর্জন ব্যর্থ হবে। এমন একটি সমাজব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেখানে একে অপরকে সম্মান করার মনোভাব থাকবে এবং কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করার সংস্কৃতি থাকবে না। উন্নতর মানবিক সমাজ যদি আমরা তৈরি করতে না পারি, তাহলে ডলারের হিসাবে দেশ উন্নত হবে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। জাতির জনক অবশ্যই সোনার বাংলা ডলারের হিসাবে চিন্তা করেননি। বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের মতো হবে। প্রত্যেকের বাড়ি, গাড়ি, বড় বড় এ্যাপার্টমেন্ট থাকবে, সমস্ত রাস্তা দোতলা হয়ে যাবেÑ এমন নয়। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাম্যের, ভ্রাতৃত্ববোধের, পরস্পরকে ভালোবাসার এবং সহনশীল হৃদয়বান বাংলাদেশের। যেখানে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য থাকবে। কিন্তু সাংস্কৃতিক সাংঘর্ষিক অবস্থা এবং বিভেদ থাকবে না। সবাই মিলে এমন একটি সমাজ গঠন করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে আজকের শোক দিবসে সমগ্র বাঙালি জাতির শপথ নেওয়া উচিত। ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে পুরো জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ এবং সোচ্চার। এমনকি যারা দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ততটা সোচ্চার হয় না, আজ তারাও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোসহ সকল পেশা এবং শ্রেণির মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এই জঙ্গিবাদকে না বলেছে। জঙ্গিবাদ দমন করার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ জঙ্গিবাদের যারা মূল পৃষ্ঠপোষক, তাদেরকে এই বার্তা দেওয়া গেছে যে, পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যেÑ ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান, সেই সব দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ বাংলাদেশ থেকে ভিন্নতর। এই বাংলায় জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই হবে না। তারপরও আমাদের অনবরত সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী এবং এ দেশীয় দোসররা অব্যাহতভাবে একটির পর একটি চক্রান্ত করেই চলছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকা- এবং ২১ আগস্ট যারা গ্রেনেড হামলা করেছিল তাদের অনেককে এখনও বিচারের আওতায় আনা যায়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি বিদেশে পলাতক রয়েছে। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার বিচার দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। আমি মনে করি, এই সব হত্যাকা-ের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা যায়, তাহলে দুর্বৃত্তরা বর্তমান সরকারকে নামিয়ে অন্য কোনো জঙ্গিবাদের সমর্থক সরকার আনতে ব্যর্থ হবে। অর্থাৎ জঙ্গিপনার জন্য উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারবে না। জঙ্গিবাদের সমস্যা কেবল বাংলাদেশে নয়, এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলে অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য জঙ্গিরা যে পরিবেশ খুঁজছে তা তারা করতে পারবে। সে জন্য আমাদের আরও সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশে বিগত দিনে যেসব হত্যাকা- সংঘঠিত হয়েছে, তার বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সমাজের সচেতনগোষ্ঠী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব সময় ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে কোনো চক্রান্ত এই বাংলার মাটিতে আর হতে না পারে।
লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন