আর্টিজানে পরিবার নিয়ে খেতে যাওয়াও সাজানো ছিল! অবশেষে হাসনাতের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পেলো গোয়েন্দারা
বিপ্লব বিশ্বাস : অবশেষে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।
হামলার পরদিন কমান্ডো অভিযানে সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পাওয়া হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহের কথা জানালেও এক মাস পর গত ৪ আগস্ট তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তখন ডিএমপির উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেছিলেন, হামলায় জড়িত থাকার ‘সন্দেহাতীত প্রমাণ’ পাওয়া গেলে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। তারপর তাকে হেফাজতে নিয়ে আট দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই ক্যাফেতে জঙ্গিহামলা চালিয়ে হত্যাকা-ের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কথা শনিবারই জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। সেক্ষেত্রে হাসনাতকে আট দিন জিজ্ঞাসাবাদে গুলশান হামলায় তার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না সে বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা মুখ খোলেননি। গুলশান হামলায় হাসনাতের এক সময়ের কর্মস্থল নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলামের জড়িত থাকার প্রমাণ এবং হামলায় সময়ে ধারণ করা কিছু ভিডিওতে তার গতিবিধি গোয়েন্দাদের সন্দেহের উদ্রেক করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, গুলশানের হামলার ঘটনায় হাসনাত করিমের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই ওই ঘটনায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার স্থায়ী নাগরিক। ১ জুলাই গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ। হাসনাত করিমের বাবা মোহাম্মদ রেজাউল করিম। হাসনাত বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। ব্রিটেনের নাগরিক হলেও সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে বাবার আর্কিটেক্ট ফার্মে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে পরিবার নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন বলে তিনি এর আগে জানান।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে গুলশান হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এরপর মাঠ পরিকল্পনাকারীরা নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামীহ মুবাশীর, শরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, আবীর রহমান, শফিকুল ইমলামসহ কয়েকজনকে মগজধোলাই করে প্রশিক্ষণ দিতে ঝিনাইদহ ও গাইবান্ধায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি অংশকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা করতে; আরেকটি অংশ শোলাকিয়ায়।
সূত্র জানায়, হামলার আগে জঙ্গিরা বেশ কয়েকদিন হলি আর্টিজানে খাওয়া-দাওয়া করে। তখন তারা দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করে। রেস্তোরাঁটি ঘুরে ঘুরে দেখে ও পুরো রেস্তোরাঁ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়। হামলার দিন (১ জুলাই) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের প্রস্তুত থাকতে বলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজানে যান হাসনাত রেজা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি কাক্সিক্ষত সংখ্যক বিদেশিকে দেখতে পান। এরপরই ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি আছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন জঙ্গিদের এবং প্রস্তুতি নিয়ে তাদের আসতে বলেন হলি আর্টিজানে। হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হেঁটে হলি আর্টিজানে আসে। রেস্তোরাঁর ভেতরেও হামলাকারীদের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম