রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানির মূলধন দেওয়া হচ্ছে ১০ কোটি টাকা
হাসান আরিফ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশের (এনপিসিবিএল) মূলধন গঠনে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়কে কোম্পানির মূলধন গঠনে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ওই অনুরোধে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পভুক্ত একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটি খোদ প্রধানমন্ত্রী মনিটরিং করেন। এটি বাস্তবায়নে গঠিত কোম্পানি পরিচালনার জন্য পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১০ কোটি টাকা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণুু শক্তি কমিশনের মালিকানাধীন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ-এর। যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ কোম্পানি গঠনের জন্য অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে বাংলাদেশ পরমাণুু শক্তি কমিশনের মূলধন মঞ্জুরী খাতে এ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ফেব্রুয়ারিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান ও মনিটরিং সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ৪র্থ সভায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) গঠনের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বর্তমানে কোম্পানির প্রারম্ভিক ব্যয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে নির্বাহ করা হচ্ছে। এনপিসিবিএল-এর পরিশোধিত মূলধন গঠনের জন্য ১০ কোটি টাকা গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। ইতোমধ্যে উক্ত অর্থবছর শেষ হওয়ায় কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন গঠনের জন্য ১০ কোটি টাকা চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বিভাগের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত থেকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মূলধন মঞ্জুরি খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সমন্বিত হবে বলেও সচিব উল্লেখ করেন।
এ আইনের অধীনেই ২০১৫ সালেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের এক হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আর ৪ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে রাশিয়া। তবে এর মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।
আইনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের বিধান, কোম্পানি পরিচালনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও ভূমিকা এবং প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের (রাশিয়া) ভূমিকার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
‘অন্যান্য কোম্পানির মতো এ কোম্পানির একটি বোর্ড থাকবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন এ কোম্পানির চেয়ারম্যান।’ এ ছাড়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন করে অতিরিক্ত বা যুগ্ম সচিব, এফবিসিসিআইয়ের একজন প্রতিনিধি, পিডিবির চেয়ারম্যান এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কোম্পানির পরিচালক হবেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কেন্দ্র চালু হলে তা কোম্পানির অধীনে চলে যাবে। প্রকল্পের শেষ পরিচালক কোম্পানির প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি সরকারের ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ভুক্ত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ প্রকল্পটি মনিটরিং করে থাকেন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানি গঠনের বিধান রেখে ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আইন ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম