নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ইমামসহ ২ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা
আরিফ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ইমাম ও তার সহকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ইমামের নাম আলাউদ্দিন আকুঞ্জি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। দুবছরেরও কম সময় আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একজন প্রসিদ্ধ আলেম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
শনিবার নিউইয়র্কের কুইন্সে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তারা দুজনই ঐতিহ্যবাহী ইসলামি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এর কয়েক মিনিট আগেই আল ফুরকান জামে মসজিদে তারা একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ।
নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুঞ্জির ভাই মাশুক উদ্দিন জানান, একটি বুলেট ইমাম আলাউদ্দিন আকুঞ্জির মস্তিষ্কে আঘাত করে। মৃত্যুর আগে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমি খুবই মর্মাহত। কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি শুধু মসজিদে যেতেন, নামাজ পড়তেন এবং বাসায় ফিরতেন। আমরা সবাই কান্নাকাটি করছি। এটা খুব বেদনাদায়ক।
ইমাম আলাউদ্দিন আকুঞ্জির ভাতিজা ২৬ বছরের রাহি মাজিদ। তিনি জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা ছিল না।
রাহি মাজিদ বলেন, ‘তিনি একটি মাছিকেও আঘাত করতে পারেন না। আমি নিশ্চিত নই যে, কি ধরনের একটা পশু এ মানুষটিকে খুন করেছে।
হত্যাকা-ের শিকার ইমাম আলাউদ্দিন আকুঞ্জির সহকারীর নাম থারাউদ্দিন (৬৫)। গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার ঘণ্টার মাথায় তার মৃত্যু হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। তবে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ওজোন পার্ক এলাকার আল ফুরকান জামে মসজিদ থেকে বিকালের নামাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে তারা খুন হন।
নিউইয়র্ক পুলিশের একজন মুখপাত্র টিফানি ফিলিপস এ জোড়া খুনের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার একটি রাস্তায় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খুব কাছ থেকেই দুজনের মাথায় গুলি করা হয়।
আল ফুরকান জামে মসজিদে সমবেত হয়ে এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদ জানান স্থানীয় মুসল্লিরা।
পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে এ হত্যাকা-ের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম (৩৩) বলেন, এটা প্রকৃত আমেরিকার চিত্র নয়। আমরা এ ঘটনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছি। ট্রাম্প ও তার নাটক ইসলামভীতি সৃষ্টি করেছে।
এ হত্যাকা-ের পর স্থানীয় মুসল্লিরা ঘটনাস্থলে সমবেত হন। আল ফুরকান জামে মসজিদে সমবেত হয়ে তারা এ হত্যাকা-ের প্রতিবাদ জানান।
মুসল্লিদের দাবি, ধর্মীয় কারণেই সুনির্দিষ্টভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এ হত্যাকা- মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।
আল ফুরকান জামে মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি মসজিদের সভাপতি কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বিচলিত, বিধ্বস্ত। আমাদের এর গভীরে যাওয়া দরকার। এটা জানা দরকার যে, শুধু ধর্মীয় কারণেই তারা এ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন কিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি আকস্মিকভাবে পাঁচটি গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা বাজির শব্দ নয়।
আহমেদ জাকারিয়া নামের একজন মুসল্লি বলেন, তিনি ছিলেন একজন চমৎকার, মৃদুভাষী ও নিরহঙ্কার মানুষ। কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল না। ইমাম হিসেবে তিনি ছিলেন একজন রোল মডেল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী ব্যক্তি ছিলেন একজন লম্বা হিস্পানিক (স্প্যানিশ ভাষাভাষী যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী)। গাড় নীল রঙের শার্ট ও শর্ট প্যান্ট পরা ওই ব্যক্তি একটি বড় আকারের বন্দুক বহন করছিলেন।
ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ২৭ বছরের স্টিভেন নাউথ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার ছোট জ্ঞাতিভাই সেখানে ছিল। আমি তাকে সেখান থেকে দৌড়াতে বলি। সম্পাদনা : শামস