পদ পুনর্মূল্যায়নের অপেক্ষায় অর্ধশতাধিক নেতা বিএনপির কমিটিতে আসছে বিষয়ভিত্তিক ৩ শতাধিক নতুন পদ
শাহানুজ্জামান টিটু : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলটির ভেতরে এবং বাইরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। কমিটিতে স্থান না পেয়ে অনেক যোগ্য ও নিবেদিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ও হতাশার কথা বলছেন নানা মাধ্যমে। আবার যারা কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন তাদের অনেকেই নিজেদের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব নেতারা অপেক্ষা করছেন তাদের যোগ্যতা অনুসারে পুনর্মূল্যায়ন করবে দলের হাইকমান্ড। অপরদিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা পদবঞ্চিত তাদের বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে স্থান দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দলটি।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ও নির্বাহী কমিটিতে ছয়টি পদ খালি আছে। গত কাউন্সিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতা এক পদ কার্যকর করা হবে। কমিটিতে যারা রয়েছেন এদের মধ্যে অনেকে দুই পদে রয়েছেন। তাদের একটা পদ ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে কিছু পদ খালি হবে। নতুন করে কিছু নেতা সেখানে ঢুকবে।
তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে বিষয়ভিত্তিক কমিটি করার বিষয়টি রয়েছে। যারা বাদ পড়েছে তাদের অ্যাকমেন্ডেশন করার সুযোগ আমাদের রয়েছে। এই কারণে আমি বলছি আমাদের অনেক নতুন নেতাকে অ্যাকমেনডেট করা যাবে।
কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র মূল্যায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কতটুকু আছে আমি জানি না। বিষয়ভিত্তিক কমিটিগুলো কবে হবে এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না।
অপরদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কমিটি পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে চেয়ারপারসনের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। তবে মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এটা চেয়ারপারসনের নলেজে আনবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির দু-একজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে তারাও কথা বলবেন। তিনি বলেন, যেকোনো কমিটি যারা সাধারণত তাদের প্রাপ্য পদমর্যাদা পায়নি তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ থাকে। সেসব ক্ষেত্রে কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি পরে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া যায়। এটা যদি আমরা চেয়ারপারসনের নলেজে আনতে পারি তাহলে হয়তোবা সমস্যার কিছু সমাধান সম্ভব হবে।
দলটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ২৫টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি করার চিন্তা রয়েছে তাদের। এই কমিটিগুলো করা হলে সেখানে নতুন করে কমপক্ষে তিনশ নেতা পদ পাবেন। এছাড়া কিছু পদ ফাঁকা করার লক্ষ্যে পুরনো নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে নিষ্ক্রিয়, বয়স্ক ও অসুস্থদের বাদ দেওয়া হবে।
এক নেতার এক পদ কার্যকর হলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬২ পদ শূন্য হবে। বর্তমানে স্থায়ী কমিটির দুটি, ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদ ফাঁকা আছে। এর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক ২৫ কমিটির প্রতিটিতে ১০ জন করে মোট ২৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে আরও ৩২০ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। এতে দলের বিরাজমান ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদ পুনমূর্ল্যায়নের অপেক্ষায় যেসব নেতা
পঞ্চাশের অধিক নেতা রয়েছেন যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তবে পদপদবী নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ সহ-সভাপতি এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। এনাম আহমেদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, সেলিমা রহমান, শাসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, মসিউর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, কাজী আসাদ, গোলাম আকবর খোন্দকার, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও আসাদুল হাবিব দুলু প্রমুখ।
এদিকে স্থায়ী কমিটির শূন্য দুই পদে কারা আসছেন এই নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এখন পর্যন্ত ওই দুই পদের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু এগিয়ে রয়েছেন। তবে দুই শূন্য পদে খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূর কথা শোনা গেলেও আপাতত তা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানদের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেওয়া হলে শূন্য ওই পদে যোগ্যদের স্থান দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হবে। ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, জয়নাল আবদিন ফারুক এবং মিজানুর রহমান মিনু। তবে ক্ষুব্ধ অনেক নেতা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা না করলেও গত শুক্রবার আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতকালে আমানউল্লাহ আমান, নাজিমউদ্দিন আলমসহ কয়েকজন কুশল বিনিময় করেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম