নারীর সঞ্চয়ী স্বভাব তার দুর্দিনের সহায়ক
নারী স্বভাবগতভাবেই সঞ্চয়ী। সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত মানবজাতি নারীর সেই সঞ্চয়ী স্বভাবের সুফল ভোগ করে যাচ্ছে। মানব সভ্যতার শুরুতে মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপায় ছিল শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ। শিকার এর কাজ সাধারণত পুরুষরাই করত। ফলমূল সংগ্রহ নারী পুরুষ উভয়ের কাজ ছিল। সে সময় থেকে নারী সংগ্রহিত ফলের বীজ সঞ্চয় করে রাখত।
একসময় নারী তার বাসস্থানের আশেপাশে সঞ্চিত বীজের দ্বারা চাষাবাদ শুরু করে। উদ্দেশ্য ফলমূল সংগ্রহের জন্য দূরে না যাওয়া। তখন থেকে কিছুটা অধিকার প্রবণতাও তার মধ্যে জাগ্রত হতে শুরু করেছে। সেটাও সঞ্চয়কে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ যতটুকু জমিতে ফসল ফলানো যাবে ততটুকু জমি তার দখলে চলে আসবে। এখানেও নারীর সেই সঞ্চয়ী স্বভাব কাজ করছে। তাছাড়া অন্য অর্থে বলা যায়, নারী প্রথম কৃষকও বটে। সেই তখন থেকে নারীর মধ্যে সঞ্চয়ী স্বভাব প্রকট হয়। নারী তার উৎপাদিত ফসল ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে শুরু করে। এটা অনেকটা স্বভাবজাতভাবে হয়েছে।
একসময় নারী বুঝতে পারল বেঁচে থাকার জন্য এবং পরবর্তী প্রজন্মের নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। ধীরে ধীরে সচেতনভাবেই সঞ্চয় করা শুরু হলো। নারীর সঞ্চয়ী স্বভাব সমাজের সকল স্তরে প্রায় সমভাবে লক্ষ্য করা যায়। সঞ্চয়ের প্রায় সকল মাধ্যমকে ব্যবহার করে নারী সঞ্চয় করে থাকে। নারীর সঞ্চয় প্রবণতা এবং সঞ্চয় কর্মকা- শুরু হয় মূলত ঘর থেকে। মুষ্টিভিক্ষার চাল সঞ্চয় করে নারী অনেক বড় কর্মকা- করতে পারে। ঘরের বাঁশের খুঁটিতে অর্থ সঞ্চয়, তাও নারীর চিন্তার ফসল। মাটির ব্যাংকে জমানো অর্থ তাদের সুখের দিনে শুধু নয়, দুঃখের দিনেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে তা যখন সুনির্দিষ্ট ও সুসংগঠিত রূপ দেওয়ার পর্যায়ে আসে তখন থেকে তারা প্রতিষ্ঠানিক সঞ্চয়ের দিকে ধাবিত হয়।
প্রতিদিনের ভাতের চাল থেকে একমুঠো চাল তুলে রাখলে তাতে খাদ্যের পরিমাণে তারতম্য হয় না, কিন্তু সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই সঞ্চিত চাল খাদ্যহীন দিনে একটি দরিদ্র পরিবারে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নারীর সঞ্চয়ী স্বভাব তাকে অনেক বড় কর্মের সাহস যোগায়। যুগে যুগে প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত অনেক কর্মকা- নারীর গোপন সঞ্চয় দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। স্বদেশি আন্দোলনে কত নারী তার সঞ্চিত অলংকার সানন্দে দান করেছে। যার মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান হয়েছে। পরিবারের যেকোনো সমস্যায় এখনও নারীর তিলতিল সঞ্চিত অর্থের মাধ্যমেই সমাধান হয়। পৃথিবীতে অনেক প্রথিতযশা কৃতি সন্তান আছে যারা মায়ের আশির্বাদের সঙ্গে তার গোপন সঞ্চয় এর সাহায্যে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন।
এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি পিতার অর্জিত অর্থ ছাড়াও মায়ের সঞ্চিত অর্থ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মে ব্যবহার করেননি। নারীর সঞ্চয়ী স্বভাব আসলেই তার দুর্দিনের সহায়ক, সঙ্গে সঙ্গে তার আনন্দেরও উৎস। বিভিন্ন পালা পার্বণে নারী তার সঞ্চিত গোপন অর্থ ব্যয় করে নিজের ও পরিবারের অন্যদের জন্য সাধ্যমতো আনন্দ আহরণ করার চেষ্টা করে। এটি পরিবার, দেশ তথা পৃথিবীর সঞ্চয় এর পাল্লা ভারি করেছে।
তাই বর্তমান নারীবান্ধব সরকার, নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়ে সহায়তা করার জন্য মাত্র ১০০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট চালু করার ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়াও নারীদের জন্য পরিবার সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থা চালু করেছেন। পরিবার সঞ্চয়পত্র একজন নারীর জন্য একটি নিরাপদ আয়মূলক ব্যবস্থা। আজকের সঞ্চয় আগামী দিনের সম্পদ, একথা মনে রেখে নারীকে আরও সঞ্চয়ী হতে হবে। মনে রাখা দরকার, এটি একদিন দুর্দিনের সহায়ক শক্তিতে পরিণত হবে।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন