বাংলাদেশের মতোই বেলুচিস্তানে ভারতের হস্তক্ষেপ দাবি!
মমিনুল ইসলাম: গিলগিট-বেলুচিস্তান ও পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরে ইসলামাবাদের নৃশংসতার বিষয়টি তুলে ধরায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচ নেতারা। একই সাথে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপনের জন্য মোদির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এসব নেতা। ইন্ডিয়া টুডে/এএনআই/ ডেইলি মেইল/ ডন
সোমবার এ বিষয়ে ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও ইউরোপিয় ইউনিয়নে বেলুচিস্তানের প্রতিনিধি মেহরান ম্যারি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করতে ভারত যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে বেলুচিস্তানের বিষয়েও একইভাবে হস্তক্ষেপ করবে দেশটি।
তিনি বলেন, বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের নৃশংসতার বিষয়টি উত্থাপন করায় আমি মোদিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে উচ্চাকাক্সক্ষী। আমি মনে করি মোদি প্রমাণ করেছেন, এমন মর্যাদা ভারতের প্রাপ্য। কেননা একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের প্রতিবেশী ভূখ-ের সমস্যাসমূহ জানা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও নেতৃত্বের হাতে গণহত্যার শিকার হচ্ছে বেলুচ জনগণ ।’ আর এ বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করবে বলে আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ম্যারি বলেন, ভারত বাংলাদেশের জনগণের উপর গণহত্যা বন্ধ করতে সেখানে হস্তক্ষেপ করেছে। আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার। সুতরাং ভারত একইভাবে আমাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে বলে আশা করি। মোদির মন্তব্য বেলুচিস্তানের জনগণের মাঝে আশা জুগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ম্যারির মত ভারতের কাছে একই ধরনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বেলুচ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) প্রধান ব্রাহুমদাঘ বাগ্তি। রোববার তিনি বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লিবিয়া ও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারলে কেন বেলুচিস্তানে পারবে না।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডেইলি মেইল বলছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অত্যন্ত চাপে পড়ে পাকিস্তানের বদনাম করার জন্য দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার’ এখন ভারতীয় মিডিয়াকে বেলুচিন্তানের বিদ্রোহীদের সাক্ষাৎকার নিতে উৎসাহ ও সুযোগ করে দিচ্ছে। নির্বাসিত বেলুচ নেতাদের ভারতীয় ভাষায় কথা বলতে অর্থায়ন করছে।
গত শুক্রবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সম্প্রতি উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে এক সর্বদলীয় বৈঠকে বসেন মোদি। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, পাকিস্তান ভুলে গেছে তারা যুদ্ধবিমান দিয়ে নিজেদের নাগরিকদের উপর বোমা মেরেছে। সময় এসেছে বেলুচিস্তান ও পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোই পাকিস্তানকে জবাব দিতে হবে।’
এর একদিন পর শনিবার বেলুচ ন্যাশনাল ম্যুভমেন্ট নেতা হাম্মাল হায়দার বেলুচ বলেন, বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করায় মোদির বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। এই প্রথম একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বেলুচ জনগণের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তান বেলুচিস্তানের তার নিজ নাগরকিদের উপর বোমা বর্ষণ করছে মোদির এমন বক্তব্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বেলুচ জনগণ ভারতের সঙ্গে সাধারণ স্বার্থ ভাগাভাগি করে। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক নীতিতে বিশ্বাস করি।’
বেলুচ আন্দোলনের আরেক প্রসিদ্ধ নেতা ‘ওয়ার্ল্ডস বেলুচ ওমেনস ফোরামের সভাপতি নায়েলা কাদরি বেলুচ আশা প্রকাশ করেছেন, ভারত বেলুচিস্তান ইস্যুটি জাতিসংঘে উত্থাপন করবে। তিনি বলেন, আমরা বেলুচিস্তানের জনগণ ভুক্তভোগী। আমরা আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে বিষয়টি উঠাবে ভারত।
এদিকে সোমবার ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচ নেতাদের প্রশংসার বিষয়টি তুলে ধরেছেন মোদি। রেড ফোর্টের অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মোদি সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনা করেন। সন্ত্রাসবাদের কাছে ভারত কখনও মাথানত করবে না বলে উল্লেখ করেন মোদি।
স্বাধীনতনা দিবসের ভাষণে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন বেলুচিস্তান, গিলগিট ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের আমার ব্যাপক প্রশংসা করেছে। এই অবহেলিত প্রদেশের বাসিন্দারা যেভাবে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাতে আমি অভিভূত।
এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সমর্থনের অভিযোগ এনে দেশটিকে আক্রমণ করে কথা বলেন মোদি। তিনি বলেন, যখন পেশোয়ারে স্কুল শিশুদের হত্যা করা হয়েছে তখন ভারত দুঃখ প্রকাশ করেছে। এটা আমাদের প্রকৃতি। অন্যদিকে তারা সন্ত্রাসের গুণকীর্তন করেছে।
এদিকে বেলুচিস্তানকে কাশ্মীরের সঙ্গে তুলনা করায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নবাব সানাউল্লাহ জেহরি। বলেছেন, বেলুচিস্তানের জনগণ অনুগত ও দেশপ্রেমিক। দেশের শত্রুদের অসাধু পরিকল্পনা তারা গ্রহণ করবে না।
বেলুচিচস্তান নিয়ে মোদির মন্তব্যের পর স্বেচ্ছায় নির্বাসিত বেলুচ নেতাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জেরি। সব সমস্যা সমাধানে সংলাপকে একমাত্র উপায় বলেন তিনি। রোববার এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্বেচ্ছায় নির্বাসিত নেতাদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে আসতে বলেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রথমসারির গণমাধ্যম পাকিস্তান সম্পর্কে মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণকে আক্রমণাত্মক অভিহিত করে তার সমালোচনা করেছে। এছাড়া মোদির বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি। পাকিস্তানের জন্য এটাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দীর্ঘ অস্থিরতার বিষয়ে কথা না বলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পত্রিকাটি। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ