কেক কাটাহীন জন্মদিন, শোকের শক্তি পরীক্ষা
অজয় দাশগুপ্ত
খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানানোর খুব বেশি কারণ ঘটেনি আমার জীবনে। রাজাকারদের মন্ত্রী-মিনিস্টার করা স্বামীর পদাংক অনুসরণ করে তিনি এদেশের সচেতন মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন বারবার। তার আমলে এমন এক জায়গায় চলে গিয়েছিলাম আমরা যেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ দেখাই যেত না। ক্রমাগত ঝাপসা হয়ে আসা সে সময়কে নানাভাবে আহত করেছেন তিনি। তাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছিল জামায়াত সঙ্গে থাকা মানেই গদি লাভ। খালেদা জিয়া ভেবে নিয়েছিলেন এদেশে ককটেল রাজনীতিই শেষকথা। কি দারুণ মনোভাব। স্যালাইনের মতো এক চিমটি মুক্তিযুদ্ধ, এক চামচ রাজাকারী, এক খাবলা জাতীয়তাবাদ আর সবার ওপরে ভারত ও সাম্প্রদায়িকতার জুজু। তাদের ধারণা ছিল, এভাবেই জীবন চলে যাবে। তার সঙ্গে থাকা যেসব নেতারা আজ দূরে বা গুটিয়ে আছে তারা কোনো দল করতে এসেছিল আদৌ? তাদের দরকার ছিল গদির ভাগ। সেটা পাবার পর তাদের পাওনা বুঝে নিয়ে সবাই এখন যার যার জায়গায় ফিরে গেছে। যে কথা বলছিলাম, আহত চেতনা আর মুক্তিযুদ্ধকে তার গুণধর বড় পুত্রটি নিহত করার আগেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছে।
খেয়াল করবেন, তিনিও বিএনপির এই দশা আওয়ামী লীগের আন্দোলন বা কাজের ফলে হয়নি। এর দায়িত্ব নিয়েছিল সময়। বিএনপি যদিও বলে ষড়যন্ত্র, আমি বলি সময় ও প্রকৃতির মার। যারা ওয়ান ইলেভেন এনেছিল তারা দুই নেত্রীকেই মাইনাস করতে চেয়েছিল। তখন আমি এই বলে সাবধান করেছিলাম, মাইনাসে মাইনাসে কিন্তু প্লাস। সময় ও নিয়মের নিয়মে প্লাসে মাইনাসে মাইনাস হয়ে বেগম জিয়া আজ এই জায়গায়। তিনি মনে করেন বা করতেন, সাইলেন্ট মেজরিটি তার দলকে তুলে আনবে। মেজরিটি আছে বৈকি। কিন্তু মেজরের দলে ক্যাপ্টেনের বড় অভাব। কাপ্তানহীন জাহাজ চলবে কিভাবে?
তার চেয়েও বড় কথা বিএনপির আসল আদর্শ কি তা তারা নিজেরাও জানেন না। আওয়ামী লীগ যেমন এখন আর মুজিববাদ বলে না তাদেরও মত বদলাতে হবে। কিন্তু তাদের তো সত্য বা সহজ কোনো ইতিহাসই নেই। এতটুকু আসার পেছনে যেসব কাহিনী মিডিয়া ওপেন হবার পর সেসব মানুষ আর পাতে নেয় না। আসলে জামায়াতের নীতি বা পথ ভয়ানক মনে হলেও তারা টিকলেও বিএনপি টিকতে কষ্ট হবে।
একা হতে হতে ভরসাহীন খালেদা জিয়া এবার তার জন্মদিনে কেক কাটেননি। এই কেক কাটা নিয়ে কত আপত্তি, কত গুজব, কত ধরনের প্রচার। এককালের আপোসহীন তিনি কারও কথা শোনেননি। এটা যদি তার আসল জন্মদিন হয়ও তিনি নিভৃতে পালন করতে পারতেন। জাতির জনকের মহিমা ম্লান করার রক্তমাখা কেক প্রতিবার বিএনপির পাপের বোঝা বাড়িয়েছিল, যার পরিণতি আজ বন্যাও গুলশানের ঘটনার অজুহাতে কেক না কাটা। গুলশানের ঘটনার পর বিএনপি বলেছিল সরকারের হাত আছে। জঙ্গিরা নাকি আসল জঙ্গি না। তো কার জন্যে তিনি কেক কাটা মুলতবি করলেন? আওয়ামী লীগের কথিত গুলশান ষড়যন্ত্রের জন্য এতবড় সেক্রিফাইস?
তারপরও ধন্যবাদ। অন্তত মিডিয়ায় বেহায়া কিছু নেতাদের ভীড়ে তাকে কেক কাটার ভিতর দিয়ে কোটি মানুষের বিবেক কাটতে দেখা যায়নি। আমি পজেটিভ মানুষ। আমার বিশ্বাস এমনভাবে মেনে নিতে নিতে তিনি একদিন জন্মদিনও আর পালন করবেন না। তবে কে জানে কোথায় কোন খেলা চলছে? এর ভিতর কোনো মেরুকরণ বা কোনো ষড়যন্ত্র থাকলে অচিরেই তা টের পাব আমরা। এ অবদি শোক দিবসের শক্তিকেই বাহবা দিই। এভাবেই সে পরাভূত করুক যাবতীয় অন্যায়।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন