সিটিসেল টিকিয়ে রাখতে চায় কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স বাতিলে নীতিগত সিদ্ধান্ত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও পৌনে ৫’শ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করায় দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার এ সংক্রান্ত ফাইলটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তসহ গ্রাহকদের বিকল্প সেবা গ্রহণের জন্য ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময় আরও সাতদিন বাড়িয়ে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে।
এদিকে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রাহকদের গতকালও এসএমএস বার্তায় জানিয়েছে, ‘গ্রাহকরা যেন বিভ্রান্ত না হন। প্রতিষ্ঠানটি এই মাসের মধ্যেই বকেয়া পরিশোধ ও নতুন বিনিয়োগে অন্যান্য মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গ্রাহকসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।’ গ্রাহকদের বিকল্প সেবা না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এই এসএমএস দেওয়া হয় এবং এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। গত একমাস ধরে এই মোবাইল অপারেটরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা শোনা গেলেও গ্রাহকরা বিকল্প সেবা নেননি। কারণ এটি দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। একেকজন গ্রাহক ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নম্বর ব্যবহার করছেন। গ্রাহকরা এই সেবার অধীনেই থাকতে চান।
মেহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় চেয়েছি। সরকারের কাছেও আবেদন জানিয়ে বলেছি- প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি জানান, এ মাসের মধ্যেই সিটিসেল নতুন বিনিয়োগ নিয়ে অন্যান্য মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গ্রাহকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি মনে করেন, সরকার অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে না।
গতকাল মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে সিটিসেল বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সচিবসহ বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিটিআরসির চেয়ারম্যানও ছিলেন।
বৈঠকের পর তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, টু-জি তরঙ্গ ফি, বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক তরঙ্গ ফি, রেভিনিউ শেয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতে সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও বকেয়া পরিশোধ না করায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এটি বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিকল্প সেবা গ্রহণের জন্য এর আগে সিটিসেল গ্রাহকদের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও বুধবার ১৭ আগস্ট থেকে তা আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে।
তারানা হালিম বলেন, সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু হচ্ছে। আগামীকাল (আজ বুধবার) সরকারের কাছে ফাইল পাঠানো হবে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের কাছে গেলে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাবে।
এরপর কিভাবে বকেয়া আদায় করা হবে এমন প্রশ্নে তারানা হালিম বলেন, এই বকেয়া রাজস্ব আদায় করবই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যে বকেয়া আদায়ের ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারি, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি জানান, মামলা-মোকদ্দমাসহ যা যা দরকার সবই করার হবে এই বকেয়া আদায়ে।
সিটিসেলে কর্মরত ৪ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির বিষয়ে সরকার কোনো দায়িত্ব নেবে না জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসি কোনো মতামত বা অভিমত প্রদান করতে পারে না। কারণ এটি সিটিসেলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
সেক্ষেত্রে সাতদিন পর সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাবে কিনা এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ সিটিসেল গ্রাহকদের বিকল্প সেবা নেওয়াার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বকেয়া আদায়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি থেকে নোটিশ প্রদানসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স বাতিল হবে। সম্পাদনা: আ. হাকিম