উসাইন বোল্টের বাড়ি!
ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বের ইতিহাসে দ্রুততম মানব। যে মনে করে, সে এত দ্রুত দৌড়াতে পারে যা অবিশ্বাস্য। অলিম্পিক কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট। রোববার ১০০ মিটার দৌড়ে নিজের গড়া বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে সে। শ্বাসরুদ্ধকর ও হৃদয়কাঁপানো মুহূর্তের মধ্য দিয়ে মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ভাঙেন আগেকার রেকর্ড।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে কোনো মানুষের পক্ষে ৯.৫১ সেকেন্ডে এ রেকর্ড ভাঙা প্রায় অসম্ভব। তা সত্ত্বেও ২৯ বছর বয়সী এ দৌড়বিদ বেশ শান্তভাবেই বলছেন, ‘আমি মনে করি আমি ৯.৪ সেকেন্ডে গিয়ে থামব। তবে কখন, কেউ তা জানে না।’
বিস্ময়কর প্রচেষ্টায় এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মাত্র এক বছরের মধ্যে ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড ভাঙলেন তিনি। এছাড়া তিনি ২০০ মিটার দৌড়েও সোনা জয়ের লড়াইয়ে রয়েছেন।
উসাইনের দীর্ঘ দৌড়ের সব অনুশীলন শুরু হয় পিছিয়ে পড়া গ্রামের ধুলিময় রাস্তায়। তার জ্যামাইকার শিরউড কন্টেন্টের জরাজীর্ণ কাঠের ভবনের মধ্যে খোলামেলা চরে বেড়ায় ছাগল। আইজল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ট্রিলনি পাহাড়ে বাস করতেন তিনি।
উসাইন বোল্ট ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ভাই সাদিকি ও বোন শিরিনের সঙ্গে গ্রামেই বেড়ে উঠেন। তার বাবা ওয়েলেসলি ও মা জেনিফার মুদি দোকান চালাত।
এ সমস্ত দিনে কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই পার করতে হয়েছে তাকে। স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিল সে। এখানে এখনো মাঠ কৃষক সম্প্রদায়ের প্রাণ শক্তি। তার বাবার মতে প্রধান কাঁচা ফসল মিষ্টি আলু তাকে আলোর গতি দিয়েছে।
গত বছর এ সময়ে বেইজিংয়ে অলিম্পিকে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে ছেলের রেকর্ডের পেছনে গোপন রহস্য কি তা জানতে চাইলে বিশ্ব মিডিয়াকে ওয়েলেসলি বলেন এটা নিশ্চিতভাবেই রাঙা আলু।’
উসাইনের চাচি লিলিয়ানের মতে, যখন তার বয়স ৯ বছর ছিল তখন তাকে বেশ মানসিক উচ্ছ্বাস ও শক্তি সম্পন্ন মনে হয়েছে। সে অধিক শক্তি অর্জনের জন্য কাজ করত। তার বাবা বলল, তার কোনো সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন অবশ্যই তার মাথায় চটপটে জাতীয় কিছু আছে। তবে চিকিৎসক জানালেন তার কোনো সমস্যা নাই। দৌড়ানো শুরু করার পর সে আরাম করে বসত।
১২ বছর বয়সে তার স্কুলের মধ্যে সবেচেয় দ্রুততম দৌড়বিদ হন। কিন্তু ক্রীড়া পাগল তরুণ ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি অধিক ঝোঁক ছিল।
তার বাল্যকালের নায়ক ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ক্রিকেট কিংবদন্তি পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুস, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, অমি ম্যাথিউ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রিস গেইল। উসাইন খুবই প্রতিশ্রুতিশীল ফাস্টবোলার ছিলেন।
যখন তিনি হাইস্কুলে উঠলেন তার ক্রিকেট কোচ তার বিস্ময়কর গতি লক্ষ্য করলেন। তাকে ট্রাক ও ফিল্ড ইভেন্টে চেষ্টা করার পরামর্শ দিলেন। ২০০১ সালে হাইস্কুলে সে প্রথম বার্ষিক চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল অর্জন করেন। ১৪ বছর বয়সে ২০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৫ বছর বয়সে পূর্ণ উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চিতে অবতীর্ণ হয় সে। স্কুল প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সবেচেয়ে উঁচু ছিল সে। ট্রাকে তার ভালো ফলাফলে জ্যামাইকার বিত্তবান লোকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন তিনি। পরবর্তীতে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য শীর্ষ অ্যাথলেটদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে কিংস্টনে যান। ২০০২ বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে তার বয়স ছিল ১৫। ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা বিজয়ী হয় সে। এ সময় বোল্ট সবচেয়ে কম বয়সী তরুণ স্বর্ণ বিজয়ী ছিলেন।
শিরউড কন্টেন্ট গ্রামের সংগ্রাম থেকেই একের পর এক মেডেল লাভ করেন বোল্ট। যা তার ক্যারিয়ারকে গুরুত্ববহ করে তোলে। ফাস্ট ফুড, বাস্কেট বল উপভোগের সুযোগ পান। আমেরিকান কলেজে স্কলারশিপে পড়ার বেশ কয়েককটি প্রস্তাব পান। কিন্তু সবকিছু প্রত্যাখ্যান করে কিংস্টনের প্রশিক্ষণকেই বেছে নেন। এক মুহূর্তের জন্য তিনি নিজেকে কম গতি সম্পন্ন হতে দেননি।
২০০৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচে চলে আসেন। ২০০৬ সালে প্রথম বড় ধরনের মেডেল পান তিনি। জার্মানিতে আইএএএফ ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটের ফাইনালে ২০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্য বিজয়ী হন।
উসাইনের কোচ তাকে ৪০০ মিটার দৌড়ের অনুশীলন করাতে চান। তবে সে ১০০ মিটারের প্রশিক্ষণ নিতে চান।
একই কৌশলে ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে ১০০ মিটারে সময় নেন ৯.৬৯ সেকেন্ড। এর পর ২০১২ সালে লন্ডনে সময় নেন ৯.৬৩ সেকেন্ড। এবার তারচেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন। কিন্তু
সোনা তার হাতছাড়া হয়নি। এখন তিনি দাঁড়িয়ে অন্য এক ইতিহাসের সামনে। আগের দুই আসরে তিনি ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ১০০ মিটার রিলেতে সোনা জেতেন। এবার তার লক্ষ্য হ্যাটট্রিক সোনার হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ