সিরিজ বোমাহামলার ১১ বছর এখনও বিচারাধীন ৫৯ মামলা
সুজন কৈরী : আজ ১৭ আগস্ট। দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার এগারো বছর। ২০০৫ সালের এই দিনে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেই সময় একযোগে কেঁপে উঠে সারা দেশ। এ ঘটনার এগারো বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ওই হামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। ভয়ঙ্কর এই হামলার ঘটনায় ১৬১টি মামলার মধ্যে এখনও বিচারাধীন রয়েছে ৫৯টি।
এদিকে সিরিজ বোমা হামলার ১১ বছর পরও জেএমবি’র কার্যক্রম ভয়ঙ্কর গতিতে চলছে। ইতিমধ্যে গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে এবং ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবি প্রমাণ করেছে যে, এখনও সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে। যদিও পুলিশ ও র্যাব সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এ সংগঠনটির সদস্যদের গ্রেফতার করছে। গতকালও রাজধানীর মিরপুর, মগবাজার ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির নারী উপদেষ্টাসহ চার নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এ মূহুর্তে কোনো নাশকতা ঘটানোর মতো শক্তি বর্তমানে জেএমবির নেই। ক্রমাগত অভিযানে এই সংগঠনের কার্যক্রম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে কল্যাণপুরে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জেএমবি’র ৯ জন নিহত হওয়ার পর সারাদেশে জেএমবির নেটওয়ার্ক অনেকটা হাতের মুঠোয় এসেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে জঙ্গিরা সিরিজ বোমা হামলা চালানোর পর থেকেই র্যাব জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম শুরু করে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে র্যাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।
২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। পুলিশ ও র্যাব এ ১১ বছরে কয়েকশ জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করেছে। এদের অনেকে অবশ্য জামিনে ছাড়াও পেয়েছে। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় সারাদেশে ১৬১টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০২টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। বিচারাধীন ৫৯টি মামলা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০২টি মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদ- আর ২৪৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। বাকি ৫৯টি মামলা এ বছরেই শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুল্লাহ আবু।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার বাইরের ৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অনেক মামলায় সাক্ষীদের না পাওয়ার কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। জঙ্গিদের যাতে কঠোর সাজা হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করে। জেএমবির কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। জেএমবির অনেক সদস্য এখনও আত্মগোপনে আছে। অনেক সদস্য জামিনে ছাড়া পেয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে।
২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে আসে। এরপর দেশ জুড়ে শুরু হয় একের পর এক জঙ্গি বোমা হামলা। এসব হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন। আহত হন ৪ শতাধিক। জঙ্গি গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় গ্রেফতার হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আব্দুল আউয়াল ও হাফেজ মাহমুদসহ ৭৪৭ জন আসামি। ২০০৭ সালের মার্চে শীর্ষ ৬ জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ পর্যন্ত জেএমবির ১৫ জন শীর্ষ নেতার ফাঁসির দ- দিয়েছেন আদালত। সম্পাদনা: এম আলম