প্রতিদিন ১৮ জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে
রিকু আমির : প্রতিদিন গড়ে ১৮ জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এ তথ্য চলতি আগস্ট মাসের (১৬ তারিখ পর্যন্ত)। জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত হয়েছে ২১ জনেরও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু আক্রান্তের হার দেখে শঙ্কা প্রকাশ করে। কেননা, অন্য বছরের চেয়ে এবারের হার শুরু থেকেই বেশি। জুন থেকে এ পর্যন্ত যে হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে ৪৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও জুন মাসে সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পায় (১৭২ জন)। জুলাই মাসে মে মাসের চেয়ে বৃদ্ধি পায় ১৩ গুণেরও বেশি (৬৫৪)।
জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সেল সূত্র জানায়, জুন মাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পপি (১৫), শামীম (২৩), সাইফুন্নাহার ও কাজী রোকসানা (৩২) ও জুলাই মাসে কাকনের (১৩) মৃত্যু হয়। পপি ও শামীম ঢামেক হাসপাতাল, সাইফুন্নাহার স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড হাসপাতাল, কাজী রোকসানা সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং কাকন ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুবরণ করেন।
অধিদফতর জানিয়েছে, গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল আগের ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। আর এবার পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে অবস্থা গত বছরের চেয়ে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য সূত্র অনুসারে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র হয়। তখন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কেবল সরকারের সংগৃহীত তথ্য মতে দেশে ২৮ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়। মারা গেছে ২৪২ জন। এর মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল প্রথম পাঁচ বছর। ২০০০ সালে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯৩ জন; ২০০১ সালে দুই হাজার ৪৩০ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৪৪ জন; ২০০২ সালে ছয় হাজার ১৩২ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৫৮ জন। ২০০৩ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। সে বছর আক্রান্ত হয় ৪৮৬ জন এবং মারা যায় ১০ জন। তবে এরপর পরিস্থিতি ফের খারাপ আকার ধারণ করে। ২০০৪ সালে আক্রান্ত হয় তিন হাজার ৯৩৪ জন, মারা যায় ১৩ জন; ২০০৫ সালে আক্রান্ত হয় এক হাজার ৫৮ জন, মারা যায় চারজন এবং ২০০৬ সালে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ২০০ জন, মারা যায় ১১ জন। এরপর থেকে টানা চার বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যুর রেকর্ড নেই সরকারি হিসাবে। যদিও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রতিবছরই ছিল। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০১১ সালে। সে বছর এক হাজার ৩৬২ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ছয়জন। সম্পাদনা: এম আলম