পাকস্থলী থেকে ইয়াবার পুঁটলি বের করার মুহূর্ত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ
সুজন কৈরী : শুল্ক গোয়েন্দার হাতে আটক যাত্রী ইমাম হোসেনের পাকস্থলীতে লুকানো চার হাজার পিস ইয়াবা পায়ুপথ দিয়ে দফায় দফায় বের করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার শুল্ক আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত রোববার দুপুরের দিকে ইমাম হোসেনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। ইমাম হোসেন পাকস্থলীতে ইয়াবা বড়িগুলো বহন করেছিলেন।
অভিনব উপায়ে ইয়াবা বহন ও তা উদ্ধারের পেছনের কথা জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ জানায়, ইমাম হোসেনকে আটক করে ওইদিন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় পাকস্থলী থেকে একের পর এক ইয়াবার পুঁটলি বের করে আনার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। সোমবার ভোরে সর্বশেষ পুঁটলি যখন বের করে আনা হয়, তখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে ইমাম হোসেনের শরীর। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার পর আশঙ্কামুক্ত হলে দুপুরে তাকে হাসপাতাল ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়। বিকালে তাকে শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় বিমানবন্দর থানায়।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইমাম হোসেনকে আটক করা হয়। কিন্তু প্রথমে তিনি ইয়াবা থাকার কথা অস্বীকার করেন। তার হ্যান্ড ব্যাগে ব্যাপক তল্লাশির পরও ইয়াবা না পাওয়ায় তার পেটে চাপ দিয়ে ইয়াবার অস্তিত্বের সন্দেহ হওয়ায় তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে ইয়াবা থাকার কথা স্বীকার করে ইমাম হোসেন জানান, ৪০টি করে মোট ১০০টি ছোট পুঁটলিতে ৪ হাজার পিস ইয়াবা রয়েছে। পরে রোববার সন্ধ্যায় র্যাবের পাহারায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর তার এক্সরে করা হয়। তাতে পাকস্থলীতে সুস্পষ্ট দেখা যায় ইয়াবার পুঁটলিগুলো। জরুরি বিভাগের শল্যবিদ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন অস্ত্রোপচার করার। কিন্তু তাতে ইমাম হোসেন বাদ সাধেন। পেট না কেটে পায়ুপথেই ইয়াবাগুলো বের করা সম্ভব জানিয়ে ইমাম হোসেন সেই উপায়ও বলেন। তিনি জানান, একটা সিরাপ খেলে মলত্যাগের সময় সবগুলো পুঁটলি বের হয়ে আসবে। ইমাম হোসেনের একথায় চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। পরে রাত আটটার দিকে এক গ্লাস পানি দিয়ে একুয়ালাক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় ইমাম হোসেনকে। এই ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টা পর হতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে দফায় দফায় এই পুঁটলিগুলো পায়ুপথ দিয়ে বের করে দেন ইমাম হোসেন।
শুল্ক গোয়েন্দার জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম হোসেন জানান, রোববার ভোর পাঁচটার দিকে তিনি ইয়াবাগুলো ৬টি সাগর কলার সঙ্গে গিলে খান। বমি ঠেকানোর জন্য এবোমিন জাতীয় ট্যাবলেট খান।
ইমাম আরও জানান, পনেরো হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি এ ইয়াবার পুঁটলি গিলেছেন। পেশায় মাছ ধরার দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও বাড়তি আয়ের জন্য এই প্রথম এ কাজে লিপ্ত হন বলে জানিয়েছেন ইমাম হোসেন। এই ইয়াবার চালানের মালিকের নাম আবুল কাশেম। তিনি টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী বলেও শুল্ক গোয়েন্দাকে তথ্য দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে পেটের ভেতর চার হাজার পিস ইয়াবা লুকিয়ে নভোএয়ারের একটি বিমানযোগে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় আসেন ইমাম হোসেন। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। পেটের ভেতরে লুকানো ইয়াবার বিশাল চালান দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে যান শুল্ক গোয়েন্দার সদস্যরা। সম্পাদনা: মোরশেদুল আলম