শোক দিবসে হাসি, গান, নাচ!
অনির্বাণ বড়ুয়া : ১৫ আগস্ট পালিত হলো জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আর সব শোক দিবসের চেয়ে এটির কিছুটা ভিন্নতা ছিল। এবারের শোক দিবসে বিএনপি চেয়ারপার্সন তার বিতর্কিত জন্মদিন উদযাপন থেকে বিরত ছিলেন।
বিএনপির জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কমল এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বিএনপি করি। কিন্তু তাই বলে তো আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কথা অস্বীকার করতে পারি না। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছি। এটি চিরসত্য কথা।’
বিএনপির রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফেরত এসেছেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। (খবর বাংলানিউজের)। এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ফেসবুকে তার এই ফিরে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অনাকাক্সিক্ষত এসব পরিবর্তন যখন বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের খুশি করেছে ঠিক সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর অনাকাক্সিক্ষত ছবি তাদের মনে দারুণ ব্যাথা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছবি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের বর্তমান দায়িত্বশীলদের শোক দিবসের একটি র্যালির ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ নেতাকর্মী হাস্যোজ্জ্বল। এই ছবি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে সৈকত ভৌমিক নামে একজন লিখেছেন, ‘শোক দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ভাইয়ারা’।
সৈকত ভৌমিকের ওই পোস্টের নিচেই ইফতি শিমুল নামে একজন লিখেছেন, ‘ফর্মালিটি মেইনটেইন করলে হাসি হাসি মুখ নিয়েই করতে হয়। কিছু বলার নাই। এরা তো তাও ভালোÑ এদিকে ছাত্রলীগের এই শাখাতো বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেসাকেই খুনি বানিয়ে তাদের ফাঁসি চাইছে।’
এটি লিখে তিনি একটি ছবি জুড়ে দেন। যেখানে দেখা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নামে একটি ব্যানারে লেখা, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেনা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সকল পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন।’
অপর একটি ছবিতে দেখা যায় শোক দিবসের দোয়া মাহফিলে কয়েকজন হাস্যোজ্জ্বল মুখে গান পরিবেশন করছেন। এটি দেখে রুমা ফারহানা নামে একজন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এটা কেমন দোয়া মাহফিল?’
অপর একটি ভিডিও পূর্বের ছবিগুলোকেও হার মানিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার ব্যানারের সামনে একটি মেয়ে দৃষ্টিকটু নৃত্য পরিবেশন করছেন। তবে ভিডিওটির কমেন্ট সেকশনে একপেশে কমেন্টে দেখে অনেকে বলছেন, কোনো গ্রুপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি তৈরি করে থাকতে পারে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান্নারত একটি ছবি ও এমন বিতর্কিত তিনটি ছবি পোস্ট করে সাংবাদিক শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘আজ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছ দেখুন। কী তীব্র কষ্ট তিবুকে চেপে রেখেছেন। আর বাতিনটা ছ দেখেন। সারাদেশে নিশ্চয়ই এমন শত শত ছআছে। মন্তব্য নিষ্প্রয়ে।’
এসব ছবি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের একজন মারিয়া সুলতানা লিখেছেন, ‘রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতি, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুইটার ওপর থেকেই টোটালি মন উঠে গেছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রো যাকে হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছেন, কিছু বামণ প্রাণি সেই শিখর তো দূরে থাক পাদদেশের মূল্য উপলব্ধি করার ক্ষমতাও রাখে না। এরা জানে না গোটা জাতি কতটা হারিয়েছে, এরা শুধু বোঝে নিজেদের প্রাপ্তিটুকু। নষ্ট রাজনীতি বিষিয়ে দিয়েছে এদের চেতনাবোধকে।’
এদিকে যারা এসব ছবি পোস্ট করেন ও এমন কর্মকা-ের সমালোচনা করেন তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জামায়াতের এজেন্ট বলে হেনস্থার শিকার হতে হয় আওয়ামী লীগের একটি অংঙ্গসংগঠনের কর্মীদের হাতে। সৈকত ভৌমিককেও হতে হয়েছে। একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেনÑ কয়েকজন ফেসবুক ইনবক্সে তাকে জামায়াত এজেন্ট বলছেন। তাদের উদ্দেশে সৈকত বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ বিজয় দিবসের ভাষণের কিছু লাইন তুলে ধরেনÑ ‘চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি না সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনি আপনার কর্তব্য দেশের জনগণের প্রতি কতটা পালন করেছেন, সেটাই বড় কথা।’
ভিডিও লিঙ্ক :
যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ংধরভঁষ.রংষধস.৩১৩৯২/ারফবড়ং/১০২০৩৯৯৬৯৭৭২২৪৪৩৫/
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী