কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতকে উদ্যোগ নিতে হবে : আলী রিয়াজ
আরিফুর রহমান: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রিয়াজ বলেছেন, কাশ্মীরে দীর্ঘ সময় ধরে সহিংসতার একটা কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ । গত এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মুফতি সাঈদের কন্যা মেহবুবা মুফতি দায়িত্ব নেন। তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কাশ্মীরে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কী ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। মেহবুবা মুফতি এখন পর্যন্ত খুব একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, তা মনে হয় না।
বিবিসি বাংলার কাছে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান আলী রিয়াজ। পাকিস্তান এবারের স্বাধীনতা দিবসকে ভারতের কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছে। ভারত সরকার তার কড়া সমালোচনা করেছে। এই মন্তব্য বা পাল্টা মন্তব্য বিবাদকে আরো জোরাল করবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রিয়াজ বলেন, একদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তারা কাশ্মীরের জন্য স্বাধীনতা দিবসকে উৎসর্গ করার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের কথা বলেছেন, যেটা ভারতীয়রা কখনও বলেন নি। এখন যেহেতু ওই সমস্ত দিক সামনে আসছে সেহেতু বোঝা যাচ্ছে এই টানাপোড়েন আরও বাড়বে। যারা এই টানাপোড়েনকে উস্কে দিতে চান যারা, তারা সেটা ভালভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। যেটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য খুবই বিপদজনক এবং সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গে বৈরিতা কতটা কাটিয়ে উঠতে চায় এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রিয়াজ বলেন, দুই দেশের মধ্যেই একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা চায় না এর একটি সমাধান হোক। কারণ হচ্ছে এই ধরনের পরিস্থিতি বজায় রাখার মধ্য দিয়ে তাদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা থাকে। যেমন পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাশ্মীরের সমস্যার সঙ্গে তাদের দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যুক্ত। সেখানকার কিছু কিছু মিলিটারি সংস্থা তাদের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি অংশের স্বার্থের সাথে যুক্ত।
আলী রিয়াজ বলেন, একইভাবে ভারতীয়দের দিকে থেকে দেখলে ভারতীয় মিলিটারি ফোর্সের যে শক্তি, তার যে যৌক্তিকতা তৈরি করা, সেটার ক্ষেত্রে কাশ্মীরের পরিস্থিতি যদি কাজে দেয় এবং ভারত সেটা ব্যবহার করে। ফলে আমার কাছে মনে হয় দুই পক্ষই এক অর্থে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এই স্বার্থের কারণেই এর সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগটা ভারতকেই নিতে হবে। তবে সেটা তারা নিচ্ছে না। উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি অব্যাহতভাবে এই সমস্যা চলে আসছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক, পারস্পরিক সুবিধা আদায়, চাপ তৈরি করা এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থ এ সমস্ত কিছু জড়িয়ে পড়ছে। মাঝখান থেকে যেটা হচ্ছে কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকের ওপর নিপীড়ন নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের যে মৌলিক মানবাধিকারগুলো সেগুলো সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ