খালেদার জন্মদিন ইস্যু দুই মত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের
দীপক চৌধুরী : পনেরো আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন না করাকে ‘রাজনৈতিক উদারতা’ হিসেবে দেখলে ভুল হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ছেলে কোকোর জন্মদিন পালন করতে পারবে না বলেই বিএনপি নেত্রী জন্মদিন পালন করেননি। মঙ্গলবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তার এ বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা দ্বিমত পোষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে বলেছেন, এটাতো অবশ্যই উদারতা। তবে যে বা যিনি যেভাবে মূল্যায়ন করার দরকার মনে করছেন তিনি সেভাবেই করছেন। জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকেই বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কেক না কাটার সিদ্ধান্ত বা জন্মদিন না পালনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা ও মন্ত্রী সাধুবাদ জানিয়েছেন এ সিদ্ধান্তের।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার ১৫ আগস্ট কেক না কাটার সিদ্ধান্ত জাতির সামনে আরেকটি প্রতারণা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিনের তারিখ জালিয়াতের দায়ে যেমন অভিযুক্ত তেমনিভাবে জাতির সামনে প্রতারণার দায়েও অভিযুক্ত। তিনি (খালেদা) তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেননি যে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে এবার জন্মদিন পালন করেননি। তাই তার হঠাৎ জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত জাতির সামনে আরেকটি প্রতারণা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ১৫ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে। দেশের চলমান সংকট, বন্যা পরিস্থিতি ও নেতা-কর্মীদের জেল-গুম-খুনসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার খালেদা জিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হয়নি। সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আসলে এ সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। দেশে বর্তমানে অরাজকতা চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন পালন না করার বিষয়ে কেউ যদি এর পেছনে ‘অন্য কোনো কারণ’ দেখে থাকেন, রাজনৈতিক উদারতা না দেখেনÑ তাহলে এটি হবে ব্যক্তির ব্যাপার। সরকার নানাভাবে বিএনপিকে কোণঠাঁসা করছে, ধংস করছে। তবে আবার যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসে, দেশে শান্তি আসে, মানুষ প্রাণ খুলে হাসতে পারে তাহলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, এ সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনের সরকার। এ সরকারের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবরকম বেআইনি ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, বাস্তবায়ন করছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকতে স্বৈরাচারী পন্থায় যেতে হয়। সরকার তাই করছে। ভোটের আগে তারা বলেছেÑ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য তারা নির্বাচন করছে আর এখন বলছে ২০১৯ সালের আগে আর নির্বাচন হবে না। এটাতো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী একটি অবৈধ সরকার এটি। যে সরকারের ১৫৪ জন এমপি অনির্বাচিত, সে সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জনসমর্থনহীন এ সরকার। এ সরকার আমলে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। ধর্মীয় নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। ঘাতকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। দেশে আইনের শাসন নেই। আমি বলবÑ ধর্ম নিয়ে রাজনীতিও আওয়ামী লীগই করছে। হিন্দুদের বাড়ি দখল, প্রতিমা ভাংচুর, বাড়ি-জমিও দখল করছে তারা। দুঃশাসনে জর্জরিত মানুষ। শুধু তাই নয়Ñ দেশনেত্রীর জন্মদিন না পালন করাকে এখন ইস্যু বানানোর পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি