বিপ্লব বিশ্বাস : জেএমবি এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত। আর দুই গ্রুপের দুই মতাদর্শ এজেন্ডা নিয়ে নব্য সদস্যরা এখন নতুন করে হত্যাযজ্ঞ ও নাশকতা চলাচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট সূত্র জানায়, দেশে গত এক বছরে যত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই জেএমবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে বর্তমানে জেএমবি দুই গ্রুপে বিভক্ত। দুটি গ্রুপেই বিভিন্ন নামে নাশকতা করছে।
সূত্র জানায়, দুই গ্রুপের মধ্যে প্রথমটি মাওলানা সাঈদুর রহমানের অনুসারীদের। তারা পীরদের টার্গেট করে হত্যা করে। কখনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা আবার কখনো আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তাদের অঙ্গসংগঠন হতে চায় তারা। তাই যেকোনো হত্যাকা-ের পর আন্তর্জাতিক সংগঠনকে দিয়ে দায় স্বীকার করায়। এই গ্রুপে ৪০-৪৫ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এদের বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের। ইসলামিক নেতা ও উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, গোপীবাগের কথিত পীর লুৎফর রহমান ও বাড্ডার খিজির খান হত্যার সঙ্গে এ গ্রুপটি জড়িত। অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রুপটি ব্যাংক ডাকাতিসহ চুরি-ছিনতাইয়ের কাজে লিপ্ত। অপর গ্রুপের শীর্ষনেতা মো. জাহিদ হোসেন সুমনকে (বোমারু মিজান) পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। বর্তমানে সে ভারত থেকে নির্দেশনা দিচ্ছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দেশে আইএসের দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে জেএমবি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নাশকতা ঘটাচ্ছে। পুরনো গ্রুপটি মাজারপন্থীদের হত্যায় জড়িত। ভিন্ন মতাদর্শের আরেকটি গ্রুপ নতুনভাবে সংগঠিত হয়েছে। তারা বিদেশিদের হত্যা করছে। জেএমবির নতুন গ্রুপ নিউ-জেএমবি নামে পরিচিত।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রুপের সদস্যরা মাওলানা সাঈদুর রহমানের মতাদর্শবিরোধী। সদস্যদের বেশিরভাগ উচ্চবিত্ত, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তারা জীবনে অন্তত একবার মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া, লিবিয়া ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে ঘুরতে কিংবা পড়াশোনা করেছে।
নিউ জেএমবি’র সদস্যদের টার্গেট মূলত বিদেশিরা। মুসলমানদের উপর খ্রিস্টান ও ইহুদিদের অত্যাচার, নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএসের) মতাদর্শী। তাদের আইএসের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখে কথিত জিহাদে উৎসাহী করা হয়। নতুন এই জেএমবি দেশে-বিদেশি হত্যাসহ হোসেনি দালানে হামলা ও গুলশান হামলার মতো বড় হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সম্পাদনা: আ. হাকিম