জামায়াতের ইসলামী ছাত্রী সংস্থাই আত্মঘাতী বাহিনী তৈরিতে ব্যস্ত!গ্রুপ স্টাডির নামে মেয়েদের দলে ভেড়াচ্ছে নারী জঙ্গিরা
বিপ্লব বিশ্বাস : জামায়াতের ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থা জঙ্গিদের মগজ ধোলাই এবং আত্মঘাতী বাহিনী তৈরির কাজ করছে। পাশাপাশি জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-এর (জেএমবি) নারী সদস্যদের ইয়ানত বা তহবিল গঠনের জন্যও সাহায্য করে যাচ্ছে এই ছাত্রী সংস্থা। এমনকি জাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত ও গরিবদের সাহায্য করার কথা বলে এই ইয়ানত সংগ্রহের দেখভালও করে তারা। গ্রেফারকৃত চার নারী জঙ্গি প্রাথমিকভাবে এ তথ্য দিয়েছে র্যাবকে।
র্যাব সূত্রমতে, জেএমবির নারী সদস্যরা নীরবে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা ইয়ানত সংগ্রহ, সংগঠনের প্রচারণা ও সদস্য সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বেছে নিয়েছে। গ্রুপ স্টাডির নামে মেয়েদের দলে ভেড়াচ্ছে তারা। জেএমবি’র অনেক নারী সদস্য মেধাবী হওয়ায় প্রাইভেট পড়ানোর নাম করেও সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের এই কাজে সহযোগিতা করছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা। জেএমবির গ্রেফতারকৃত ওই চারজন, আকলিমা রহমান মনি, ঐশী, ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘনা। এদের মধ্য ঐশী ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। বাকিরা মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আকলিমা জেএমবির নারী ইউনিটের উপদেষ্টা।
র্যাব দাবি করেছে,ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও ১০ সন্দেহভাজন নারী জেএমবি সদস্যের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় মামলাও হয়েছে। ওই দশজন হলেন, সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুবা ওরফে তাহিরা, সায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলী, মনিরা জাহান ওরফে মিলি এবং ছাবিহা ওরফে মিতু।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার লুৎফুল কবির জানান, গত ২১ জুলাই জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলীয় আমির মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানকে টঙ্গী থেকে গেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মিলে নারী জেএমবিদের সন্ধান। তিনি জানান, আকলিমা রহমান গত রমজানে ১২ হাজার টাকার তহবিল সংগ্রহ করে দিয়েছেন। এরপর থেকেই তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। তার তহবিল গঠনের সত্যতা যাচাই করতে র্যাব বিষয়টি কয়েক দফায় খতিয়ে দেখেছে। এরপর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
খন্দকার লুৎফুল কবির আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছি, তা ভয়াবহ। আমরা পুরো বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রেখেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবকিছুই আমাদের নজরদারিতে আছে। তিনি আরও বলেন, মামলাটি আমরা তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। অনুমতি পেলেই পুলিশের কাছ থেকে আমরা মামলা নিয়ে আসব। তখন এ বিষয়ে আরও তদন্ত করা হবে। তখন অনেক কিছু জানা যাবে।
মানারাত ইউনিভার্সিটির ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান ওরফে মনি। সে জানিয়েছে, হিজবুত তাহরির ও কথিত আইএসের জন্য সে লোক রিক্রুটের দায়িত্বে ছিল। জামায়াতের ছাত্রী সংস্থার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে দুই বছর ইন্টারনেটের মাধ্যমে আইএসের বিভিন্ন তথ্য আপলোড করে তা বিভিন্নজনকে পাঠাতো। এছাড়া বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ (ইয়ানত) করে জঙ্গিদের ফান্ডে দিত। এ টাকা তার কাছ থেকে গ্রহণ করত টঙ্গীর আনসার আলী। এই আনসারের মাধ্যমে মাহমুদুল হাসান নামে আরেক জঙ্গির কাছে অর্থ যেত। সম্প্রতি মাহমুদুলকে র্যাব গ্রেফতার করে। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে নারী জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়া যায়।
মানারতের একই বিভাগের নতুন শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান মৌসুমী (মৌ) গোয়েন্দাদের জানায়, সে আল কায়দা নেতা আনওয়ার আওলাকীর জীবনদর্শনের অডিও এবং ভিডিও সংগ্রহ করে। পরে তা অনেকের মাঝেই ছড়িয়ে দেয়। তার মা মাকসুদা রহমান জামায়াতের সমর্থক। ইশরাতের তথ্য অনুযায়ী, আওলাকীর অডিও লেকচারের ২২টি সিরিজ সে নিজে শোনে। পরে বাংলায় ডাবিং করা আরও ৩০টি সিরিজ সংগ্রহ করে। মাসখানেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের প্রভাষক আবদুল আজিজ তাকে পেন ড্রাইভে করে কিছু তথ্য দেয়। আজিজ আরবিও শেখাতেন। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। আজিজের মতোই তাদের জিহাদি সংক্রান্ত শিক্ষক হিসেবে কাজ করে জিয়াউর রহমান নামে আরেকজন। এরা আত তামকিন সাইটের মাধ্যমে লেকচার শোনারও পরামর্শ দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইশরাত আরও জানায়, তারা বড় একটি গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করে। এজন্য আনসার ইসলামিয়া ও খিলাফাহ নিউজ নামে দুটি লিংক তারা ছড়িয়ে দেয় সামাজিক মাধ্যমে। এছাড়া তাদের দলের সদস্যরা আইএসের স্বর্ণমুদ্রা সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম