পাক-ভারত ছায়াযুদ্ধের কারণে ভ-ুল হতে পারে সার্ক সম্মেলন
হাসান : ভারত-পাকিস্তান চলতি ছায়াযুদ্ধের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সার্ক শীর্ষ বৈঠক। নভেম্বরে ইসলামাবাদে হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলন ভারত আদৌ যোগ দেয় কি না, তার উপরই নির্ভর করছে সবকিছু। দিল্লি ও ইসলামাবাদের ছায়াযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু অবশ্যই সেই কাশ্মীর। চার সপ্তাহ হয়ে গেল লাগাতার কার্ফু, প্রাণহানী ও সংঘর্ষ চলছে উপত্যকায়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারতবিরোধী প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। পাল্টা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ তোলায় দ্বৈরথ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
পাকিস্তান দাবি করেছিল, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে কাশ্মীর নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক দিল্লি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরীর এই দাবির কড়া জবাব দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ইসলামাবাদে গিয়ে আলোচনায় বসতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সে আলোচনা হবে সীমান্তপাড়ের সন্ত্রাস নিয়ে। এটাই এখন জ্বলন্ত সমস্যা। তবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। কারণ এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোনো অধিকারও নেই ।
নভেম্বরে শীর্ষ বৈঠকের আগে অক্টোবরে সার্ক দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন হওয়ার কথা। নয়াদিল্লি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে এই সম্মেলনে পাঠানো হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের আশঙ্কা- ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত সার্ক শীর্ষ বৈঠকই না ভন্ডুল হয়ে যায়। কেন না সার্ক-এর নিয়ম অনুসারে গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর যেকোনো একজন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত না-হলেই শীর্ষ বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। এর আগে কার্গিল যুদ্ধ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অরাজকতার জেরে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল সার্ক শীর্ষ সম্মেলন।
এই মুহূর্তে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, শেষ পর্যন্ত এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারত যাক বা না যাক, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ঠেলায় নভেম্বরের ওই সম্মেলন এখনই কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে। অথচ দু’বছর আগে ক্ষমতায় আসার পরেই প্রতিবেশী নীতিকে তাঁর কূটনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বারবার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম গন্তব্য হিসাবেই বেছে নিয়েছিলেন নেপালকেই। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্র নেতাদের।
প্রত্যেকটি সার্ক-রাষ্ট্রে মোদি নিজে সফর করেছেন। এর আগে কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে মোদি তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা করেছিলেন- দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে গোটা অঞ্চলের সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য করিডর, সার্ক মেডিকেল ভিসা, টিবি এবং এডস-এর জন্য সার্ক রিজিওনাল ল্যাবরেটরি তৈরি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কেন্দ্র হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সার্ক সংক্রান্ত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের আশু সম্ভাবনা নেই। এ কথা বুঝতে পারছে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোও। নেপালের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশনাথ পা-ের বক্তব্য, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোট দেশগুলো পড়ে পড়ে মার খাবে।’’
তিনি আরও বলেন, নিজেদের স্বার্থেই ছোট দেশগুলোর উচিত ভারত ও পাকিস্তানকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করা। তাঁর পরামর্শ, ‘‘সার্ক-এর বর্তমান সদর দফতর কাঠমান্ডুতে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটা সেতু বানাতে তাই নেপালই এগিয়ে আসুক।’’
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ললিত মান সিংহের কথায়, ‘‘সার্ক-এর চার্টারেই রয়েছে যে এখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় তোলা যাবে না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জেরে বারবার প্রভাবিত হচ্ছে সার্ক।’’ তাঁর কথায়, কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না, কারণ সে ভাবে অগ্রগতিই হয়নি কোনো বিষয়ে!-আনন্দবাজার। সম্পাদনা :ইসলাম