জিপিএ-৫ এর ৮৫ শতাংশই বিজ্ঞানের পাসে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে
দেলওয়ার হোসাইন : চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হারের দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। তবে মেধার সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে আছেন ছেলেরা। বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। ফল বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় যত পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন, তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থী। এবার আটটি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৮ জনই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থী। পাসের হারেও বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থীরা এগিয়ে। এ শাখা থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৫১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৬ শতাংশ। পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৯১ জন। গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩১ জন।
মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সংগীত শাখা থেকে ৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৭৫১ জন। তিন শাখার মধ্যে এ শাখার ফল সবচেয়ে খারাপ।
এবার ১০ বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ জন। ছাত্রী ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন।
ফলাফল অনুযায়ী, ছেলেদের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর মেয়েদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩২ হাজার ৩৮১ জন, ছাত্রী ২৫ হাজার ৮৯৫ জন। এবার দেশের আটটি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার ৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এবার এইচএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪২ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডেও এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে। পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। গতবার পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭২১ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪১৪ জন।
গত বছরের তুলনায় এ বছর অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী, পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএর পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বরও দেওয়া হবে। গ্রেড পদ্ধতিতে ফলাফল দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে নম্বর দেওয়া বন্ধ করা হয়েছিল। শুধু একজন শিক্ষার্থী কত জিপিএ পেত, তা দেওয়া হতো। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, একজন শিক্ষার্থী সৃজনশীল, বহুনির্বাচনি ও ব্যবহারিক অংশে কত নম্বর পেল, তাও আলাদাভাবে অনলাইনে দেওয়া হবে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে যশোর বোর্ড। সবচেয়ে কম ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ পাসের হার কুমিল্লা বোর্ডে। ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী বোর্ড এবং ৭৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ নিয়ে ঢাকা বোর্ডের অবস্থান তৃতীয়।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৪, ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে বরিশাল বোর্ড, পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে সিলেট বোর্ড এবং সপ্তম স্থানে থাকা চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বাইরে পাসের হারে এগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ৮৮ হাজার ১৯ শতাংশ। এরপরই কারিগরিতে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজে (ডিআইবিএস) পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ঢাকা বোর্ডে। এ বোর্ডে পূর্ণ জিপিএ পেয়েছেন ২৮ হাজার ১১০ জন। এরপরই যশোর বোর্ডের শিক্ষার্থীদের অবস্থান। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৬ জন। ৩ হাজার ৮৯৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন দিনাজপুর বোর্ডে। এছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডে ২ হাজার ২৫৩, কুমিল্লায় এক হাজার ৯১২, সিলেটে এক হাজার ৩৩০ এবং বরিশালে ৭৮৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। মাদ্রাসা বোর্ডে ২ হাজার ৪১৪ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ছয় হাজার ৫৮৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ডিআইবিএসে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২৫ জন। সম্পাদনা : আ. হাকিম