গাবতলী পশুরহাটে ডিএনসিসির নির্দেশনা মানা হচ্ছে না
সূজন কৈরী : রাজধানীর গাবতলী পশুরহাটে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নিয়ম ভঙ্গ করে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। ডিএনসিসি গরু প্রতি ৫০ টাকা, মহিষ ৭০ টাকা এবং ছাগল ১৫ টাকা করে হাসিল নির্ধারণ করলেও সংশ্লিষ্ট ইজারাদার মহাজনদের কাছ থেকে ৩শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই রশিদের বেশকিছু কপিও পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব ইজারা হাসিল রশিদ মহাজনদের নামে না কেটে জোরপূর্বক ইজারাদারের অনুগত রাখালের নামে কাটা হচ্ছে। এমনকি ক্রয়কৃত পশু ইজারাদার নির্ধারিত পিকআপ ভ্যানে বহন করতেও বাধ্য করা হয়। অনুসন্ধানে হাটের ক্রেতাদের কাছে দুই ধরনের রশিদ পাওয়া গেছে। একটি সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া এবং অন্যটি ইজাদারের নিজস্ব তৈরি করা।
এসব অনিয়মের বিষয়ে গাবতলী পশুরহাটের ইজারাদার মো. লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বিষয়টি সত্য নয়। হাটে একটি মাংস ব্যবসায়ী চক্র এসব করছে।
অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের দোকানে ডিএনসিসির দেওয়া পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম। কিন্তু তারা তা করছেন না। এছাড়া দোকানের বাইরে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য গরু বা অন্যপশু ক্রয় করলে শতকরা সাড়ে ৩টাকা করে হাসিল আদায় করা হয়। সেক্ষেত্রে শতকরা হিসাবে তিনশ, চারশ বা ৫শও হতে পারে। দুই ধরনের হাসিল রশিদের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই রশিদ আমি তৈরি করিনি। এটি মাংস ব্যবসায়ী চক্র তৈরি করে হাটের বাইরে নিয়ে ক্রেতাদের দিয়ে থাকে। তার দাবি, মাংস ব্যবসায়ীদের একটি চক্র তাকে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডিস্টার্ব’ করছে। তিনি এ বিষয়ে ডিএনসিসিতে অভিযোগও করেছেন বলে জানান।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ হাজার মাংস ব্যবসায়ী গাবতলীর এ হাটে পশু কিনতে আসেন। তাদের অভিযোগ, ইজারাদারের এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়, মারধর করা হয় এবং অবৈধভাবে ১৫-২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালবাগের এক মাংস ব্যবসায়ী জানান, হাট থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনার পর ইজারাদারের সিন্ডিকেটের লোকজন দাম জানতে চায়। তাদের কাছে দাম ৮০ হাজার জানালে তারা বলে, মিথ্যা কথা বলছিস, এটার দাম ৯০ হাজার টাকা। পরে তাকে ইজারাদারের কাছে নিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, প্রতিদিন বেশকিছু মহাজন সিন্ডিকেটটির প্রতারণার এই ফাঁদে পড়ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, গাবতলী পশুরহাট থেকে সাধারণ ক্রেতার জন্য হাসিল প্রতি গরু সাড়ে ৩ টাকা এবং মাংস ব্যবসায়ীর জন্য প্রতি গরু ৫০ টাকা, মহিষ ৭০ টাকা, ছাগল ১৫ টাকা। দুই ধরনের রশিদের বিষয়ে তিনি বলেন, সাদাকালো রশিদটি আমাদের। নীল বা হলুদ রঙের যে রশিদ এটি ইজারাদারের বিষয়।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ হাজারের বেশি গরু আমদানি হয় গাবতলী পশুহাটে। এর অধিকাংশই বিক্রি হয় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার মাংস ব্যবসায়ীর কাছে। দৈনন্দিন এ পশুরহাটে গড়ে দশ হাজারের বেশি গবাদি পশু বিক্রি হচ্ছে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম